বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘নব্য আওয়ামী লীগ’ গঠনের এই প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হলে তা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, ভারতের জন্যও উদ্বেগজনক হতে পারে। কারণ, এই পরিকল্পনায় যাঁদের নেতৃত্বে আনার কথা হচ্ছে, তাঁদের কেউ কেউ অতীতে পাকিস্তানঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তাঁদের ভাবমূর্তিও তেমন পরিষ্কার নয়। দিল্লির এক প্রাক্তন কূটনীতিক বলেন, “আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি। তার নেতৃত্ব পাকিস্তানপন্থীদের হাতে গেলে তা ভারতের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।”
সম্প্রতি ‘জুলাই আন্দোলন’-এ অংশ নেওয়া ছাত্রদের গড়া জাতীয় নাগরিক দল (এনসিপি)-র নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তিনি দাবি করেন, সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান তাঁদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বলেন, প্রাক্তন স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস ও সাবেক সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা-নেত্রীদের নেতৃত্বে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠিত হলে সেটিকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
পোস্টে আরও বলা হয়, এই নেতারা শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন এবং জনগণের সামনে নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ‘আসল’ আওয়ামী লীগ হিসেবে তুলে ধরবেন।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “হাসনাতের পোস্টের আগেই আমরা এ ধরনের ষড়যন্ত্রের খবর পেয়েছি। এসব নতুন কিছু নয়। ২০০৬ সালেও একইভাবে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও সেই পথেই এগোচ্ছে একটি চক্র।”
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীদের মনে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের প্রতি অকুণ্ঠ আস্থা রয়েছে, যা ভারতের কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারের অবস্থানের সঙ্গে তুলনীয়। হাসিনাহীন আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই টিকবে না, বরং এটি দলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, বর্তমানে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের প্রচেষ্টা তাঁদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন নেতাদের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে— হাসিনার বিরুদ্ধাচরণ করলে নিরাপত্তা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। এই প্রস্তাব দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর একটি অংশ ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
তাঁর অভিযোগ, কলকাতায় অবস্থানরত কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এই চক্রান্তে জড়িয়ে পড়েছেন এবং অন্যদেরও এতে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “যাঁদের পরিচ্ছন্ন বলা হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই প্রকৃতপক্ষে নানা অনৈতিক লেনদেনে জড়িত। কেউ কেউ পাকিস্তান বা চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখছেন।”
এই চক্রান্ত মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, শেখ হাসিনা নিজে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে যুক্ত হয়ে ২৩টি জেলার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি কর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, “আমি বেঁচে আছি, আবার ফিরব। যাঁরা নির্যাতন চালাচ্ছে, তাদের বিচার হবেই।”
হাসিনা আরও বলেন, “আমি দেশ ছাড়তে চাইনি, ইস্তফাও দিইনি। আমাকে জোর করে দেশছাড়া করা হয়েছে। আমার সরকারকে ষড়যন্ত্র করে হটানো হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের শেষ দেখে ছাড়ব।”
সুত্র: আনন্দ বাজার পত্রিকা