নোটিশ:
শিরোনামঃ
সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথমবার চট্টগ্রাম যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমিরাতকে ১৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিলের শুনানি শুরু টেকনাফে আরাকান আর্মির হামলা: দুইজন গুলিবিদ্ধ, তিনজনকে ধরে নিয়ে গেল বিদ্রোহীরা যুদ্ধ বলিউড সিনেমা নয়, বাস্তবের বিভীষিকা— সাবেক ভারতীয় সেনাপ্রধান অভিযোগ করতে গিয়ে হাজতে! গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা ঈদকে সামনে রেখে আগামী দুই শনিবার খোলা থাকবে শেয়ারবাজার বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির অভিযোগ: ১৭২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তথ্য চেয়েছে দুদক নিষিদ্ধ সংগঠন ঘোষণা আজ, আওয়ামী লীগের পক্ষে অনলাইনে সক্রিয় থাকলেই শাস্তি চীন-পাকিস্তান-আফগানিস্তান: এক টেবিলে বন্ধুত্ব ও নিরাপত্তা

আল জাজিরার চোখে বাংলাদেশের বিতর্কিত নববর্ষের শোভাযাত্রা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৬৮ বার দেখা হয়েছে
ঢাকায় বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের সময় মিছিলে দেখা যাচ্ছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রতিকৃতির মতো একটি মূর্তি, ছবি: এএফপি
ঢাকায় বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের সময় মিছিলে দেখা যাচ্ছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রতিকৃতির মতো একটি মূর্তি, ছবি: এএফপি

গত বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এই বছর প্রথমবারের মতো বাংলা নববর্ষ উদযাপন করলো বাংলাদেশ। কিন্তু এই উদযাপনের সবচেয়ে আলোচিত ও প্রতীকী আয়োজনে, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক—অনলাইনে, অফলাইনে, রাজনীতিতে ও সংস্কৃতিতে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় গত ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই বিষয়গুলো উঠে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, যারা ১৯৮৯ সাল থেকে এই শোভাযাত্রা আয়োজন করে আসছে, তারা জানায়, এটি “প্রথম নামেই ফিরে যাওয়া”। অনুষদের ডিন ও আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শেখ আল জাজিরাকে বলেন, “এটি নতুন কিছু না, ১৯৮৯ সালে যেভাবে শুরু হয়েছিল, সেভাবেই নাম ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”

তবে এই নাম বদলের পেছনে রাজনৈতিক বার্তাও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আয়োজকদের মতে, এটি ছিল দীর্ঘ ১৫ বছর শাসন করা হাসিনার আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকার থেকে বেরিয়ে আসার একটি সাংস্কৃতিক প্রয়াস। তারা মনে করেন, “মঙ্গল” নামটি আওয়ামী লীগের ‘একক সাংস্কৃতিক আধিপত্য’র প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয় ১৯৮৯ সালে, এরশাদ শাসনের বিরুদ্ধে এক প্রকার সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ হিসেবে। বিশাল রঙিন মুখোশ ও কাগজে বাঁশে তৈরি পেঁচা, বাঘ, কবুতরের মতো প্রতীকী ভাস্কর্য ব্যবহার করে ছাত্ররা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠহীন প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ১৯৯০ সালে এরশাদ পদত্যাগ করলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে। এরপর ১৯৯৬ সালে এই শোভাযাত্রার নাম বদলে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ রাখা হয়। “মঙ্গল” শব্দটির সংস্কৃত উৎস এবং “কল্যাণ” অর্থ থাকায় এটি একটি সমষ্টিগত শুভ প্রত্যাশার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

এ বছরের শোভাযাত্রায় ছিল ঐতিহ্যগত প্রাণী ও মাছের প্রতীক ছাড়াও রাজনৈতিক বার্তা বহনকারী নতুন মোটিফ। শোভাযাত্রার অগ্রভাগে ছিল একটি ২০ ফুট উঁচু মুখোশ, যার নাম ছিল ‘ফ্যাসিবাদের মুখ’। অনেকেই এটিকে শেখ হাসিনার প্রতীক হিসেবে দেখছেন। অন্য মোটিফগুলোর মধ্যে ছিল “৩৬ জুলাই” শব্দচিত্র, যা গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনের জনতার বিদ্রোহকে স্মরণ করে, যেখানে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। ছিল মুগ্ধ নামে এক তরুণের প্রতিকৃতি—যিনি বিদ্রোহ চলাকালে বিক্ষোভকারীদের পানি দিতে গিয়ে নিহত হন। একটি পানির বোতলের মাধ্যমে তার স্মৃতি রক্ষিত হয়।

তবে এসব প্রতীকী বার্তাকে অনেকে নববর্ষের রাজনৈতিকীকরণ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে কেউ কেউ এটিকে ‘সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ’ থেকে মুক্তির প্রতীক বলেও অভিহিত করছেন। শোভাযাত্রা প্রসঙ্গে এই বিতর্ক নতুন নয়। ১৯৮৯ সাল থেকেই এসব প্রাণীপ্রতীক ব্যবহার হয়ে আসছে—তখনও যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না, তেমনই বিএনপি শাসনামলেও এসব চালু ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার অনেক শিক্ষার্থীও এ বছর নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদ করেছেন। তারা বলছেন, “যদি ১৯৯৬ সালে নাম পরিবর্তন ভুল ছিল, তবে এটাও ভুল।”

এই বিতর্ক কেবল একটি নাম নিয়ে নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গভীর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজনের প্রতিফলন। আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী—যেখানে ভাষা ও সংস্কৃতির উপর জোর। অন্যদিকে বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে—যা ইসলামি ঐতিহ্য ও ভূখণ্ডভিত্তিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, যিনি বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন, বলেন, “নববর্ষ কেবল বাঙালিদের উৎসব নয়, এটি সব বাংলাদেশির উৎসব হওয়া উচিত।” এবার ২৮টি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যারা নিজস্ব পোশাকে অংশগ্রহণ করে।

১৪ এপ্রিল সকালে হাজার হাজার মানুষ ঢাকার চারুকলা অনুষদের সামনে জমায়েত হন। অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন পরে তারা আবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই উৎসবে অংশ নিতে পেরেছেন। একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “হাসিনার শাসনামলে আমি ১০ বছর এই শোভাযাত্রা বর্জন করেছি। আজ আবার ফিরে এসেছি।” বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নাম পরিবর্তন হয়তো রাজনৈতিক, কিন্তু সংস্কৃতি নিজেই রাজনৈতিক। প্রশ্ন হচ্ছে, এই রাজনীতি কি বৈচিত্র্যের দমন করে, নাকি অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহ দেয়?

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT