ফেসবুক কন্টেন্ট মনিটাইজেশন: কেন চালু করতে হবে, এটা কী, কীভাবে পাবেন, রুলস কী, আর কী করলে মনিটাইজ যাবে না (২০২৫ সালের আপডেটেড ভার্সন)
ফেসবুক এখন আর শুধু বন্ধুদের সাথে চ্যাট করা বা ছবি শেয়ার করার জায়গা না। এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে যেখানে ক্রিয়েটররা তাদের ট্যালেন্ট দেখিয়ে টাকা কামাতে পারে। ফেসবুক কন্টেন্ট মনিটাইজেশন হলো এমন একটা সিস্টেম, যার মাধ্যমে আপনি আপনার ভিডিও, পোস্ট, রিলস, বা লাইভ থেকে ইনকাম করতে পারবেন। এই আর্টিকেলে আমি ফরমাল আর বাংলাদেশি মানুষের সহজ ভাষায় বুঝাবো—কেন এটা চালু করা লাগবে, এটা আসলে কী, ২০২৫ সালে কীভাবে পাবেন, এর রুলস কী, আর কী করলে আপনার মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যাবে। আগের রুলস আর এখনকার আপডেটেড রুলস—দুটোই মার্জ করে বিস্তারিত বলবো। চলেন, শুরু করি!
ফেসবুক কন্টেন্ট মনিটাইজেশন কেন চালু করতে হবে?
ফেসবুক মনিটাইজেশন চালু করার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত, এটা ক্রিয়েটরদের জন্য একটা টাকা কামানোর দারুণ রাস্তা। আজকাল অনেকেই ফেসবুকে ভিডিও বানায়, লাইভ করে, ফানি পোস্ট দেয়—এসব দিয়ে মানুষের মনোযোগ পায়। মনিটাইজেশন চালু করলে এই পরিশ্রমের দাম পাওয়া যায়। ধরেন, আপনি একটা ভিডিও বানালেন গ্রামের মজার কোনো গল্প নিয়ে, সেটা ভাইরাল হলো, আর তার থেকে টাকা আসতে লাগলো—এটা কি দারুণ না? এতে ক্রিয়েটররা আরও ভালো কন্টেন্ট বানানোর জন্য মোটিভেটেড হয়।
দ্বিতীয়ত, ফেসবুকের নিজেরও লাভ আছে। ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম—এই প্ল্যাটফর্মগুলো ক্রিয়েটরদের টাকা দিয়ে তাদের টানছে। ফেসবুক চায় না তাদের ক্রিয়েটররা অন্য জায়গায় চলে যাক। তাই তারা মনিটাইজেশন দিয়ে ক্রিয়েটরদের ধরে রাখতে চায়। আরেকটা বড় কথা, মনিটাইজেশন থাকলে প্ল্যাটফর্মে ভালো ভালো কন্টেন্ট বাড়ে। মানুষ বেশি সময় ফেসবুকে কাটায়, আর ফেসবুকের Ads থেকে রেভিনিউ বাড়ে। তাই এটা ক্রিয়েটর আর ফেসবুক—দুই পক্ষের জন্যই Win-Win সিচুয়েশন।
তৃতীয়ত, এটা একটা ক্যারিয়ারের পথ খুলে দেয়। বাংলাদেশে অনেক তরুণ-তরুণী এখন ফুল-টাইম ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছে। মনিটাইজেশন না থাকলে এই সুযোগটা থাকতো না। তাই এটা চালু করা মানে নিজের প্যাশনকে প্রফেশনে রূপ দেওয়া।
ফেসবুক কন্টেন্ট মনিটাইজেশন কী?
সোজা কথায়, ফেসবুক কন্টেন্ট মনিটাইজেশন হলো আপনার কন্টেন্ট থেকে টাকা কামানোর প্রসেস। ধরেন, আপনি একটা পেজ চালান বা ভিডিও বানান। ফেসবুক আপনার কন্টেন্টে Ads দেখায়, আর সেই Ads থেকে যে টাকা আসে, তার একটা পার্ট আপনি পান। এটা হতে পারে In-Stream Ads (ভিডিওর মাঝে বিজ্ঞাপন), Ads on Reels (রিলসে Ads), Stars (ফ্যানরা টাকা দেয়), Fan Subscriptions (ফ্যানরা মাসে টাকা দিয়ে সাপোর্ট করে), বা Branded Content (কোনো ব্র্যান্ডের সাথে কাজ)। মানে, আপনার কন্টেন্ট যত বেশি মানুষ দেখবে, তত বেশি ইনকামের চান্স।
২০২৫ সালে এসে ফেসবুক এটাকে আরও বড় করেছে। এখন শুধু ভিডিও না, আপনার ফটো পোস্ট বা টেক্সট পোস্টও মনিটাইজ করা যায়। এটা “Facebook Content Monetization” নামে একটা নতুন প্রোগ্রামের আওতায় এসেছে, যেটা সব ধরনের কন্টেন্টকে কভার করে।
কীভাবে মনিটাইজেশন পাবেন?
ফেসবুক থেকে মনিটাইজেশন পেতে হলে কিছু স্টেপ ফলো করতে হবে। আগে আর এখন—দুই সময়ের রুলস একটু আলাদা। আমি দুটোই বলবো, যাতে আপনি বুঝতে পারেন কীভাবে এটা চেঞ্জ হয়েছে।
আগের রুলস (প্রি-২০২৫)
আগে মনিটাইজেশন পেতে এই স্টেপগুলো ছিল:
একটা পেজ লাগতো: শুধু ফেসবুক পেজ থাকলেই হতো, পার্সোনাল প্রোফাইল মনিটাইজ করা যেত না।
Eligibility চেক: Creator Studio-তে গিয়ে দেখতে হতো আপনার পেজ Eligible কি না। শর্তগুলো ছিল—
পেজে কমপক্ষে ১০,০০০ ফলোয়ার।
গত ৬০ দিনে ৩০,০০০ মিনিট ভিউ (১ মিনিটের বেশি ভিডিও)।
পেজে ৫টা Active ভিডিও।
দেশটা Supported লিস্টে থাকতে হবে (বাংলাদেশ ছিল)।
Apply: Creator Studio-তে Monetization অপশনে Apply করতে হতো। ফেসবুক রিভিউ করতো।
Bank Account: Approval পেলে Bank Account লিঙ্ক করতে হতো।
Ads চালানো: In-Stream Ads বা Stars চালু করা যেত। Approval পেতে ২-৪ সপ্তাহ লাগতো।
২০২৫ সালের আপডেটেড স্টেপ
এখন রুলস অনেক সিম্পল আর ফ্লেক্সিবল করা হয়েছে। এখানে নতুন প্রসেস:
পেজ বা প্রোফেশনাল মোড: আগের মতো শুধু পেজ না, এখন পার্সোনাল প্রোফাইলেও “Professional Mode” চালু করে মনিটাইজ করা যায়। তবে ProMode না থাকলে প্রোফাইল Eligible হবে না।
Eligibility চেক: Creator Studio বা Meta Business Suite-এ “Monetization” ট্যাবে যান। নতুন শর্ত:
বয়স: ১৮+ হতে হবে।
দেশ: বাংলাদেশ এখনও Eligible।
পেজ/প্রোফাইলের বয়স: কমপক্ষে ৯০ দিন পুরানো হতে হবে।
ফলোয়ার/ভিউ: ৫০০ ফলোয়ার থাকলেই Stars-এর জন্য Eligible। Reels-এর জন্য গত ৬০ দিনে ১,০০০ ভিউ। In-Stream Ads-এর জন্য আগের মতো ৩০,০০০ মিনিট লাগে না, এখন Engagement-এর উপর ফোকাস।
Apply করেন: “Facebook Content Monetization” প্রোগ্রামে একবার Apply করলেই Reels, ভিডিও, ফটো, টেক্সট—সব মনিটাইজ করা যায়। আলাদা আলাদা অপশনের দরকার নেই।
Bank Account সেটআপ: Approval পেলে Bank Account বা PayPal লিঙ্ক করবেন। বাংলাদেশে International Transaction সাপোর্ট থাকতে হবে।
ইনকাম শুরু: In-Stream Ads, Ads on Reels, Stars, Branded Content—এসব দিয়ে টাকা কামানো শুরু করবেন। Approval এখন ১-৪ সপ্তাহ লাগে।
আগে আর এখনের তফাত
ফলোয়ার: আগে ১০,০০০ লাগতো, এখন ৫০০ দিয়েই শুরু।
ভিউ: ৩০,০০০ মিনিটের বদলে Reels-এ ১,০০০ ভিউ হলেই চলে।
প্রোগ্রাম: আগে In-Stream Ads, Reels Ads আলাদা ছিল, এখন একটা প্রোগ্রামে সব।
ProMode: পার্সোনাল প্রোফাইলেও এখন সুযোগ।
মনিটাইজেশনের রুলস কী কী?
ফেসবুকের মনিটাইজেশন পেতে আর ধরে রাখতে তাদের Community Standards, Partner Monetization Policies, আর Content Monetization Policies মানতে হবে। এখানে মেইন রুলস:
Original কন্টেন্ট: আপনার কন্টেন্ট নিজের বানানো হতে হবে। অন্যের ভিডিও, গান, বা ছবি কপি করলে মনিটাইজেশন যাবে না।
No Violence বা Hate Speech: হিংসা, গালি, ধর্ম-জাত নিয়ে ঝগড়া—এসব থাকলে বন্ধ।
Copyright ফ্রি: কপিরাইটেড মিউজিক বা ক্লিপ ব্যবহার করা যাবে না।
Engaging কন্টেন্ট: Clickbait বা ফেক নিউজ দিয়ে মানুষ টানলে চলবে না।
Ads-এর জন্য ফিট: ভিডিওতে Ads দেখানোর জায়গা থাকতে হবে। ১ মিনিটের কম ভিডিও এখনও মনিটাইজ হয় না।
Fake Engagement নিষেধ: বট বা ফেক অ্যাকাউন্ট দিয়ে লাইক/ভিউ বাড়ালে ধরা পড়লে ব্যান।
২০২৫ সালে নতুন যোগ হয়েছে—কন্টেন্টে “Value” থাকতে হবে। মানে, শুধু ভিউয়ের জন্য বাজে কিছু বানালে ফেসবুক Reject করতে পারে।
কী করলে মনিটাইজেশন যাবে না?
এখন আসি, কী করলে আপনার মনিটাইজেশন বন্ধ হয়ে যাবে। ফেসবুক তাদের পলিসি নিয়ে খুব স্ট্রিক্ট। কমন ভুলগুলো:
কপি কন্টেন্ট: অন্যের কন্টেন্ট চুরি করলে পেজ বন্ধ পর্যন্ত হতে পারে।
Policy ভায়োলেশন: হিংসা, নগ্নতা, ফেক নিউজ—এসব থাকলে তৎক্ষণাৎ বন্ধ।
Low Engagement: কন্টেন্টে ভিউ বা ইন্টারঅ্যাকশন কমে গেলে মনিটাইজেশন কাটতে পারে।
Ads ম্যানিপুলেশন: ফেক ভিউ বা বট ব্যবহার করলে ব্যান।
Repeated Strikes: Community Standards ভাঙলে Strike পাবেন। ৯০ দিনে ৩টা Strike হলে মনিটাইজেশন চলে যাবে।
নতুন আপডেটে আরেকটা জিনিস যোগ হয়েছে—যদি আপনি বারবার Low-Quality কন্টেন্ট (যেমন শুধু Viral হওয়ার জন্য বানানো) দেন, ফেসবুক আপনাকে Beta প্রোগ্রাম থেকে বাদ দিতে পারে।
পলিসি নিয়ে আরও কিছু কথা
ফেসবুকের পলিসি মানা একটু কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু এটা ক্রিয়েটর আর ইউজারদের সেফ রাখার জন্য। ধরেন, আপনি একটা ফানি ভিডিও বানালেন, কিন্তু তাতে কারো ধর্ম বা কালচার নিয়ে মজা করলেন—এটা Policy ভাঙবে। তাই কন্টেন্ট বানানোর আগে ভাবতে হবে, এটা কি সবার জন্য Okay? ফেসবুক মাঝে মাঝে Algorithm চেঞ্জ করে, তাই আপনার কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজিও আপডেট রাখতে হবে। ২০২৫ সালে তারা AI দিয়ে কন্টেন্ট রিভিউ বেশি করছে, তাই ছোট ভুলেও ধরা পড়ার চান্স বেশি।
শেষ কথা
ফেসবুক কন্টেন্ট মনিটাইজেশন একটা দারুণ সুযোগ। ২০২৫ সালে এসে এটা আগের চেয়ে সহজ আর বড় হয়েছে। আগে যেখানে ১০,০০০ ফলোয়ার লাগতো, এখন ৫০০ দিয়েই শুরু করা যায়। পার্সোনাল প্রোফাইলেও ProMode দিয়ে টাকা কামানোর রাস্তা খুলেছে। তবে সফল হতে হলে ধৈর্য, ক্রিয়েটিভিটি, আর রুলস মানার মানসিকতা লাগবে। সঠিক পথে থাকলে এটা আপনার জন্য ফুল-টাইম ক্যারিয়ারও হতে পারে। তাই আজই চেক করে Apply করে ফেলেন। কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে বলবেন, আমি হেল্প করবো!