সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা চলছে।
ইতিহাসের দুই ভিন্ন অধ্যায় হলেও, উভয়ের তাৎপর্য নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন অনেকে।
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন ও জুবায়ের মোহাম্মাদ—দুজনেই এই প্রসঙ্গে তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন।
যা বিষয়টিকে আরও গভীরভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তাঁর ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিঃসন্দেহে একটি বৃহৎ যুদ্ধ ছিল।
এ লড়াইয়ে শুধু বাংলাদেশের জনগণই নয়, ভারতের মতো একটি বড় শক্তিও সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল। নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটেছিল, আর জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের।
ইলিয়াস হোসেনের মতে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গঠিত বড় যুদ্ধ, যেখানে দুটি রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা এবং দীর্ঘ সময়ব্যাপী সংগ্রাম ছিল উল্লেখযোগ্য বিষয়।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের ঘটনাবলী ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি ছিল দেশের মানুষের নিজস্ব লড়াই। ইলিয়াস হোসেন আরও বলেন, ১৯৭১ সালে দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করলেও তা সার্বজনীন ছিল না।
কিন্তু ২০২৪ সালের আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণভাবে জনগণের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একনায়কতন্ত্রের বিপক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছিল, এবং এই অভ্যুত্থান ছিল সম্পূর্ণ দেশীয় প্রচেষ্টার ফল।
ছোট আকারের হলেও এটি আমাদের নিজস্ব অর্জন, যা বাঙালিদের জন্য গর্বের বিষয়।
অন্যদিকে, জুবায়ের মোহাম্মাদ তাঁর ফেসবুক পোস্টে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের ঘটনাবলীর মধ্যে ভিন্ন রকম তুলনা টানেন।
তাঁর মতে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধের ফলাফল কেবল একটি মুসলিম দেশের মানচিত্র বিভক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
কিন্তু ২০২৪ সালের আন্দোলন দেশের জনগণের জন্য একটি নতুন মুক্তির সূচনা করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, এই লড়াই বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি এবং রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট বার্তা বহন করেছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে জনগণ অত্যাচার, খুন, গুম এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল।
এটি ছিল স্বাধীনতার নতুন দাবির আন্দোলন, যেখানে মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার হয়েছে।
তাঁর ভাষায়, এটি ছিল “লাউড এন্ড ক্লিয়ার”—অর্থাৎ, দেশের মানুষ নির্ভয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
এ দুই দৃষ্টিকোণ থেকেই বোঝা যায়, ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
আর ২০২৪ সালের আন্দোলন গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
একটি জাতির ইতিহাসে এই দুই ঘটনাই অনন্যসাধারণ। একটি দিয়েছে স্বাধীনতা, আর অন্যটি দিয়েছে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।
১৯৭১ ও ২০২৪—উভয় ঘটনাই বাঙালির সংগ্রামী চেতনাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে, যা জাতির অগ্রযাত্রায় অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।