জনপ্রিয় ইসলামিক অ্যাক্টিভিস্ট ডা: শামসুল আরেফিন শক্তি তার ফেসবুক টাইমলাইনে ঘোষণা দিয়েছেন আগামীকাল শুক্রবার বাইতুল মোকাররমে বাদ জুম্মা আল্লাহকে কটূক্তিকারী রাখাল রাহাকে গ্রেফতারের দাবিতে কাফন নিয়ে আসবেন। এই ইস্যুতে তিনি ফেসবুকে বেশ কয়েকটি পোস্ট দেন। একটিতে লেখেন, “দলে দলে আসুন। কাঁদতে কাঁদতে আসুন। কাফন সাথে নিয়ে আসেন। নবির অসম্মানের জ্বালা নিয়ে বাঁচতে চাই না।”
আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, “যদি দিল বলে, কাল একটু বাইতুল মুকাররমে আসবেন। ভিডিওটা দেখে যদি মনে হয় আসা উচিত, আসবেন প্লিজ। বোনেরা নিজ মাহরাম পুরুষকে লজ্জা দিয়ে পাঠাবেন।”
উল্লেখ্য, এই ইস্যুতে মাওলানা আহমেদ রফিক, ডা: শামসুল আরেফিন শক্তি, ডা: মেহেদী হাসান, আসিফ আদনান, আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান প্রমুখ বেশ কিছু আলেম ও জনপ্রিয় ইসলামিক অ্যাক্টিভিস্টরা সরব হয়েছেন। সম্প্রতি বহু খাঠখড় পোড়ানোর পর তারা মতিঝিল থানায় রাখাল রাহার বিরুদ্ধে একটি মামলা করতেও সক্ষম হন, যদিও অদৃশ্য কারণে এই মামলার অগ্রগতি অনেকটা থমকে গেছে।
আরো পড়ুন: শাাতিম সম্পর্কিত কয়েকটি জরুরি নুকতা
উল্লেখ্য, রাখাল রাহার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে ইতঃপূর্বে ৭২ ঘন্টা সময় বেঁধে দেওয়া হলেও রাখাল রাহাকে গ্রেফতারে সরকারের অনীহার কারণে ক্ষুব্ধ হন দেশের সাধারণ আলেম সমাজ ও ইসলামপ্রিয় জনতা। এরপর একের পর এক নানা কর্মসুচী দিতে দিতে ক্রমেই কঠোরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষুব্ধ আলেম সমাজ ও ইসলামিক অ্যাক্টিভিস্টরা। এই ইস্যুতে তারা মনে করছেন, বিষয়টি ভুলে যাওয়ার মতো বা ছেড়ে দেওয়ার মতো নয়। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার স্বার্থে আল্লাহ ও নবীকে কটূক্তিকারীদের (শাতিম) ব্যপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। রাসুল অবমাননার কারণে কবি সোহেল হাসান গালিবকে গ্রেফতার করে ন্যূনতম পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আল্লাহকে অবমাননাকারী রাখাল রাহার ব্যপারে রহস্যজনক নীরবতা অবলম্বন করেছে সরকার। এমনকি এনসিটিবির কারিকুলাম সংস্কার কমিটির কাছে ইসলামপ্রিয় জনতা রাখাল রাহার অপসারণের দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত রাখাল রাহাকে অপসারণের বিষয়ে দায়সারা কোনো লিখিত পদক্ষেপও নেয়নি এনসিটিবি।
আরো পড়ুন: শাতিম ইস্যুতে আপনার করণীয়
শুধু তাই নয়, ইসলাম নিয়ে রাজনীতিকারী এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত এই ইস্যুতে সরব হয়নি বলে এক পডকাস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ডা: শামসুল আরেফিন ও তাঁর সতীর্থ ইসলামিক অ্যাক্টিভিস্ট ডা: মেহেদী হাসান। ইসলাম জোন নামক ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত এই পডকাস্টে আলোচনা করেন বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আহমেদ রফিক ও এই দুই ইসলামিক অ্যাক্টিভিস্ট। তাদের আলোচনায় আক্ষেপের সঙ্গে উঠে আসে পশ্চিমা মানবাধিকার ব্যবস্থায় মুসলিমদের ইস্যুকে ‘বাকস্বাধীনতা’র দোহায় দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি। তিনজন আলোচকই একটি বিষয়ে একমত হন যে উপমহাদেশে আল্লাহ ও রাসুল অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলিম খড়গহস্ত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উঠে আসে ১৯২৯ সালে রঙিলা রাসুল গ্রন্থের লেখককে ইলম-উদ-দ্বীন নামক জনৈক রাসুলপ্রেমীর হত্যা করার ঘটনা যার প্রেক্ষিত ধরে পাকিস্তানে ধর্মীয় ইস্যুতে হেট স্পিচ বিরোধী (ব্লাসফেমি) আইন প্রণীত হয়। কিন্তু বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইসলামী দল, ছাত্র-সমন্বয়ক থেকে থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত যেমনভাবে নীরবতা পালন করেছে তা নিয়ে আলোচনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন এই আলোচকত্রয়।
মাওলানা আহমেদ রফিক বলেন, পাকিস্তান পিরিয়ডে শাতিমের ইস্যুটা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের মতো সেকুলার নেতারা যেভাবে ডিল করেছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি, কিন্তু বর্তমান সময়ে ইসলামী রাজনীতিকদের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারছি না!
পডকাস্টের এই আলোচকরা মনে করছেন, অবিলম্বে সরকার এই বিষয়ে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
আরো পড়ুন: ব্লাসফেমি আইন কি রাখাল রাহাদের দমাতে পারবে?