
অন্যান্য সকল আইনী শাস্তির মতো শাতিমের শাস্তি কার্যকর করার দায়িত্বও শাসকের। তবে অন্যান্য বিধানের সাথে এর একটা পার্থক্য হলো, শাসক যদি আইন বাস্তবায়নে অবহেলা করে সেক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ)) প্রতি প্রবল ভালোবাসার কারণে, সংক্ষুদ্ধ হিসেবে কোনো ব্যক্তি যদি আইন হাতে তুলে নেয় তবে সেই ব্যক্তির উপর কিসাস আসবে না, কিংবা তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে না।
মনে রাখা দরকার, এটা একটা সম্পূর্ণ ইসলামি শাসন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট থেকে করা চিন্তা। বিপরীতে আমরা বসবাস করি সম্পূর্ণ একটা ইসলামবিদ্বেষী সেক্যুলার শাসন ব্যবস্থার মধ্যে। এখানে রাষ্ট্রের গোটা কাঠামোর মধ্যে ইসলামবিদ্বেষ প্রথাগতভাবে প্রথিত, এবং এখান এমন কোনো আইনই নেই, অতএব তা কার্যকর করার আলোচনারও প্রেক্ষাপট নেই।
এখন এই ধরনের রাষ্ট্রে শাতিমদের শাস্তি কার্যকর করার ব্যাপারে মুসলিমদের কি ব্যক্তি উদ্যোগে শাস্তি প্রয়োগ করে ফেলতে উৎসাহ দেয়া হবে? নাকি এদেরকে দমনে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হবে, সরকারের সাথে নেগোশিয়েট করা হবে—এ প্রশ্নের সিম্পল কোন সমাধান আমরা পাইনি। যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলে উলামায়ে কেরাম আইন হাতে তুলে নিতে উৎসাহ না দিয়ে রাষ্ট্রের উপরই চাপ প্রয়োগ করে আসছেন এবং একইসাথে যদি কেউ নিজ দায়িত্বে আইন হাতে তুলেই নেয় তাকেও আপন করে নিচ্ছেন এবং ভর্তসনা করছেন না। ইলমুদ্দীন রহিমাহুল্লাহ সহ অতীত ও বর্তমানের অনেকের ঘটনায় এটা স্পষ্ট।
আইন হাতে তুলে নিতে উৎসাহ না দেওয়ার একটা কারণ হলো, পরবর্তীতে তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার অক্ষমতা। ইসলামি শাসন ব্যবস্থার মধ্যে এটা সম্ভবপর হলেও সেক্যুলার রাষ্ট্রে এই ক্ষমতা উলামায়ে কেরামের একেবারেই নেই। এটা অন্য কাউকে উৎসাহ দেওয়ার বিষয় না, কেউ যদি নিজের জীবন বাজি রেখে নিজ দায়িত্বে করে এটা তার ব্যাপার।
অন্যদিকে এটাও সত্য যে উপনিবেশ আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমাদের এ অঞ্চলে কোন সরকারই এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। ব্লাসফেমি আইনের একটি দিক আছে, তবে সেখানেও একটা শার’ঈ প্রশ্ন থাকে, এধরনের সেক্যুলার সরকারকে আইন প্রনয়ন করতে বলার ব্যাপারটা আসলে সঠিক কি না।
সব দিক মিলিয়ে, নিরাপত্তা দিতে না পারার যে বাস্তবতা সেটার কারণেই উলামায়ে কেরাম সরকারগুলোর উপর ব্যাপারটা নিয়ে চাপ প্রয়োগ বা নেগোসিয়েশন কৌশল গ্রহণ করে থাকেন। এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা।
জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। এ আন্দোলনে ইসলাম এবং ইসলামপন্থীদের বিশাল স্টেইক ছিল। কুরবানী ছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর একেবারে জনগণের সরকার গঠিত না হলেও কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। এ বাস্তবতায়, অতীতের রিজিমগুলো এই ইস্যুতে যে ভুল করে এসেছে বর্তমান সরকারকে সেটা শোধরানোর সুযোগ দেয়া যায়, এমন আরগুমেন্ট করা সম্ভব।
বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম অতীতেও এই ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেছেন। এখনও একই নীতির ওপর আছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি নিজেও তাদের উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়েছি। সরকার যদি দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক হয় তাহলে এরকম বিষয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়ার কথা। দেশের ৯২% মানুষের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হানার রাস্তা উম্মুক্ত রেখে আপনি কখনো স্থিতিশীলতা আশা করতে পারেন না।
সার্বিক এই প্রেক্ষাপটে এই প্রেক্ষিতে আমার ও আমার ঘনিষ্ঠজনদের অবস্থানও একইরকম। যারা আইন হাতে তুলে নিতে বলছে তাদের অবস্থানের দায়িত্ব তাদের নিজেদের। এ ধরনের কোনো কর্মসূচির সাথে আমার বা আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
- দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd