নোটিশ:

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন : চ্যালেঞ্জ, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান

মোঃ রাহিম আলী
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫
  • ২৫ বার দেখা হয়েছে
জলবায়ু পরিবর্তন,বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কারণ এবং বাংলাদেশের জন্য টেকসই সমাধানের উপর আলোচনা করেছি। আরও জানবেন, কিভাবে এটি আমাদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করছে এবং কীভাবে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি।

জলবায়ু পরিবর্তন বলতে দীর্ঘমেয়াদি তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তনকে বোঝায়।

যদিও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলিও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটাতে পারে, তবে বিংশ শতাব্দী থেকে মানব কার্যকলাপের কারণে জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।

এই ত্বরান্বিত পরিবর্তন বাস্তুতন্ত্র, মানব সমাজ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।

কেন জলবায়ু পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ: বৈশ্বিক এবং স্থানীয় প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে প্রভাব ফেলে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সহ এই পরিবর্তনের প্রভাব বিস্তৃত এবং বহুস্তরীয়।

এই প্রভাবগুলি বোঝা কার্যকর প্রশমন এবং অভিযোজন কৌশল তৈরির জন্য অপরিহার্য।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাস

 

পৃথিবীর জলবায়ু : প্রাকৃতিক জলবায়ু চক্র

ভূতাত্ত্বিক সময়কালে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ, সৌর চক্র এবং পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর জলবায়ু প্রাকৃতিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

বরফ যুগ এবং অন্তঃগ্লাসিয়াল সময়কাল প্রাকৃতিক জলবায়ু পরিবর্তনের উদাহরণ।

জলবায়ুর ওপর মানব প্রভাব কখন শুরু হয়?

শিল্প বিপ্লব মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সূচনা করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বৃহৎ পরিসরে বন উজাড় এবং নিবিড় কৃষিকাজ বিপুল পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটায়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করে।

জলবায়ু সচেতনতার মূল মাইলফলক

গ্রীনহাউস প্রভাব আবিষ্কার (১৯শ শতক), আন্তঃসরকারি জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (IPCC) প্রতিষ্ঠা (১৯৮৮) এবং প্যারিস চুক্তি (২০১৫) সহ জলবায়ু বিজ্ঞান এবং নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।

আরও পড়ুনঃ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ

গ্রীনহাউস গ্যাস: উষ্ণায়নের মূল চালক

গ্রীনহাউস গ্যাস ইনফ্রারেড বিকিরণ শোষণ এবং নির্গমন করে, যা উষ্ণায়ন সৃষ্টি করে।

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে উৎপন্ন CO₂ প্রধান ভূমিকা রাখে, তবে মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড আরও শক্তিশালী হলেও কম পরিমাণে থাকে।

জীবাশ্ম জ্বালানি এবং কার্বন নির্গমন: প্রধান অবদানকারী

কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো মানব-সৃষ্ট CO₂ নির্গমনের প্রধান উৎস।

এই জ্বালানিগুলি শিল্প, পরিবহন এবং শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যা বায়ুমণ্ডলে উত্তাপ বৃদ্ধি করে।

বন উজাড় 

বনভূমি CO₂ শোষণ করে কার্বন সিঙ্ক হিসেবে কাজ করে। বন উজাড়ের ফলে সংরক্ষিত কার্বন মুক্ত হয় এবং ভবিষ্যতের নির্গমন শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পায়।

শিল্প এবং কৃষি কার্যকলাপ

গবাদি পশু থেকে নির্গত মিথেন এবং সার থেকে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড কৃষি খাতের প্রধান অবদান।

শিল্প কার্যক্রম শক্তিশালী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটায় এবং অপ্রতিরোধ্য সম্পদ ব্যবহারে সহায়তা করে।

প্রাকৃতিক বনাম মানব কারণ

প্রাকৃতিক কারণ যেমন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং সৌর কার্যকলাপ স্বল্পমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন ঘটাতে পারে। তবে, বর্তমান উষ্ণায়ন প্রবণতা মূলত মানব কার্যকলাপ দ্বারাই প্রভাবিত।

গ্রীনহাউস প্রভাব ব্যাখ্যা

গ্রীনহাউস প্রভাব কীভাবে কাজ করে: সহজ বিশ্লেষণ

পৃথিবী সূর্যালোক শোষণ করে এবং তাপ বিকিরণ করে। গ্রীনহাউস গ্যাসগুলি এই তাপের কিছু অংশ আটকে রাখে, যা পৃথিবীকে গরম রাখে।

প্রধান গ্রীনহাউস গ্যাস: CO₂, মিথেন এবং আরও

কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড প্রধান গ্রীনহাউস গ্যাস। জলীয় বাষ্পও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যদিও এর মাত্রা তাপমাত্রার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

কেন উষ্ণায়ন দ্রুততর হয়

যেমন বরফ গলে প্রতিফলন ক্ষমতা (অ্যালবিডো) হ্রাস করে এবং গলিত পারমাফ্রস্ট থেকে মিথেন নির্গমন হয়, এই ধরনের প্রতিক্রিয়া লুপগুলি বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে আরও ত্বরান্বিত করে

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি

তথ্য বলছে পূর্ব শিল্প যুগ থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রায় ১.২°C বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দশক ছিল রেকর্ডকৃত সবচেয়ে উষ্ণ, যা উষ্ণায়নের দ্রুত গতিকে নিশ্চিত করে।

বরফ এবং হিমবাহ গলন: স্পষ্ট সতর্ক সংকেত

আর্কটিক সমুদ্রের বরফ কমছে এবং বিশ্বব্যাপী হিমবাহ সংকুচিত হচ্ছে। এটি সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে এবং মেরু বাস্তুতন্ত্রে ব্যাঘাত ঘটায়।

সমুদ্রের উষ্ণায়ন এবং অম্লীকরণ: নীরব সংকট

সমুদ্র অতিরিক্ত তাপ এবং CO₂ শোষণ করে, যা উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং অম্লীকরণ ঘটায়। এটি সামুদ্রিক জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে এবং খাদ্য শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটায়।

চরম আবহাওয়া: কেন ঝড়-বন্যা বাড়ছে

জলবায়ু পরিবর্তন ঘূর্ণিঝড়, খরা, তাপপ্রবাহ এবং বন্যার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি করে। এগুলি কৃষি, জনস্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আরও পড়ুনঃ


বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন: চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ

জলবায়ু পরিবর্তন এখন পৃথিবীজুড়ে একটি অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা, এবং এর প্রভাব বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের উপর আরও মারাত্মক।

বাংলাদেশ একটি নিম্নভূমির দেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, এবং জলবায়ু পরিবর্তন এই দুর্যোগগুলিকে আরও তীব্র করছে।

আমরা বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন দিক, এর প্রভাব, এবং সম্ভাব্য সমাধানগুলো বিশ্লেষণ করব।

আমরা কীভাবে মানিয়ে নিতে পারি এবং ভবিষ্যতে টেকসই সমাধান গড়ে তুলতে পারি , তা আলোচনা করব।

বাংলাদেশের ভূ-গোলিক এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ (ইংরেজি: Ganges Delta), যা গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, এবং মেঘনা নদীর দ্বারা গঠিত।

এই বিশেষ ভূ-গোলিক অবস্থান দেশটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

দেশে প্রায় ১৬০ মিলিয়ন মানুষ বাস করে, যা পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ।

দেশের অর্থনীতি কৃষি, টেক্সটাইল, এবং মৎস খাতের ওপর নির্ভরশীল, যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ

বিশ্বব্যাপী গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলেও, বাংলাদেশে কিছু স্থানীয় উপাদান এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে।

বনভূমি ধ্বংস, অসংলগ্ন কৃষি প্রযুক্তি, এবং শিল্পবর্জ্য পরিবেশকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তাছাড়া, দেশের দ্রুত নগরায়ন এবং আবাসন খাতে অত্যধিক চাপও জলবায়ু পরিবর্তনের হার বৃদ্ধি করছে।

তাপমাত্রার বৃদ্ধি: গরমের ঝুঁকি

বাংলাদেশে তাপমাত্রা গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কৃষিতে ফলন কমে যাওয়া, খাদ্য সংকট বৃদ্ধি, এবং মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষত, গরমের কারণে হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি।

সমুদ্রস্তরের বৃদ্ধি: একটি অবশ্যম্ভাবী হুমকি

বিশ্বব্যাপী গ্লেসিয়ার গলার কারণে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর হুমকি।

উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করা কোটি কোটি মানুষ বন্যা ও ভূমি ক্ষয়ের ফলে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

সমুদ্রস্তরের বৃদ্ধির কারণে দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপদগ্রস্ত হতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ: নতুন স্বাভাবিকতা

বাংলাদেশে এখন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি আশঙ্কার বিষয় নয়, বরং তা একটি নতুন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন এবং খরা এই দেশের জন্য নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি মানুষের জীবন, অবকাঠামো এবং অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব

বাংলাদেশের কৃষি খাত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে।

বিশেষত, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ায় ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।

এছাড়া, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা অনিয়মিত বৃষ্টির কারণে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে।

কৃষকদের জন্য এই পরিবর্তনগুলি মারাত্মক, এবং খাদ্য সংকট বাড়াতে পারে।

পানি সংকট: বন্যা ও সংকটের মধ্যে ভারসাম্য

বাংলাদেশে পানির সংকট একটি জটিল সমস্যা। একদিকে, ঋতু পরিবর্তনের কারণে ভুমধ্যসাগরীয় বন্যা ঘটছে, অন্যদিকে অনেক শহর ও উপকূলীয় অঞ্চলে তাজা পানির সংকট দেখা যাচ্ছে।

ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবনতি, সমুদ্রস্তরের বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির অভাব তীব্র হচ্ছে, যা সবার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি: জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাস্থ্য প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য গভীর প্রভাব ফেলছে।

গরমের তীব্রতা, বন্যা এবং জলের অপ্রতুলতা পানিবাহিত রোগ, যেমন কলেরা, ডায়রিয়া, এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ বৃদ্ধি করছে।

এছাড়া, মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া এখন আরও বিস্তার লাভ করছে, যা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।

শহরের দুর্বলতা: নগরীর চাপে অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে

বাংলাদেশের বড় শহরগুলিতে, বিশেষত ঢাকা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক চাপ তৈরি হচ্ছে।

ঢাকা, পৃথিবীর দ্রুততম নগরায়িত শহরগুলির মধ্যে একটি, যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নাগরিক সুবিধাগুলি চাপের মধ্যে পড়ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন এই সমস্যাগুলিকে আরও তীব্র করছে, যা পানি সরবরাহ, শক্তি ব্যবস্থাপনা, পরিবহন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলিতে জটিলতা সৃষ্টি করছে।

সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিণতি

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশকে নয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।

কৃষি, যা দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

একই সাথে, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বাড়ছে, যারা গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে চলে আসছে।

এই চ্যালেঞ্জগুলি বিশেষভাবে মহিলাদের এবং শিশুদের জন্য আরও মারাত্মক, যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরিবেশগত অবনতি এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে পরিবেশগত অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে মূল্যবান বাস্তুতন্ত্র যেমন ম্যানগ্রোভ এবং জলাভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণে দেশের পরিবেশগত সেবা বিপন্ন হচ্ছে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত টেকসইতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং নীতি উদ্যোগ

বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মসূচি” (BCCSAP) অন্যতম।

এই পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি মানিয়ে নেওয়ার কৌশল, দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর এবং ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের মধ্যে সহনশীলতা তৈরি করার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে।

তবে, বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে এবং আরও সক্রিয় পদক্ষেপের প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহায়তা

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা পেয়েছে, বিশেষত জলবায়ু অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে।

তবে, এই সহায়তা আরও কার্যকরী বাস্তবায়নে রূপান্তরিত হওয়া জরুরি।

বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তব পরিস্থিতিতে রূপান্তরিত করতে আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং সমর্থন প্রয়োজন।

সম্প্রদায় ভিত্তিক অভিযোজন ( মানিয়ে নেওয়ার) কৌশল

বাংলাদেশে সম্প্রদায় ভিত্তিক অভিযোজন কৌশল সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

স্থানীয় উদ্ভাবন এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি কৌশলগুলি সম্প্রদায়গুলিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।

এগুলি আরো বিস্তৃতভাবে কার্যকর করা হলে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সহনশীলতা বৃদ্ধি সম্ভব।

প্রযুক্তিগত সমাধান ও উদ্ভাবন

বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

জলবায়ু-বান্ধব কৃষি প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থার মতো প্রযুক্তি সমাধানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এসব উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং জাতির শক্তি সাশ্রয়ী ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর করতে পারে।

নৈতিক দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশ জলবায়ু অন্যায়ের একটি আদর্শ উদাহরণ, যেখানে দেশটির কম অবদান সত্ত্বেও সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, যেন তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।

এটি শুধু পরিবেশগত নয়, মানবিক দায়িত্বেরও প্রশ্ন।

ভবিষ্যতের পূর্বাভাস

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ এখনও অস্পষ্ট। যদি যথাযথ অভিযোজন ও প্রশমন কৌশল গ্রহণ করা হয়, তবে ভবিষ্যতে দেশটি কম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তবে, এই পথে গতি বৃদ্ধি করতে না পারলে, পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে পারে।

সুপারিশসমূহ

একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে, বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী নীতি, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জলবায়ু অর্থায়ন অত্যন্ত জরুরি।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অপরিহার্য।

 

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুতর হুমকি, তবে সমন্বিত প্রচেষ্টা ও কার্যকর কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

অভিযোজন, উদ্ভাবন, এবং সহযোগিতার মাধ্যমে, আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারব।

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT