অক্টোবরের শীতল হাওয়ায় লিন ঝাও’র কণ্ঠ ছিল দৃঢ়। পিপলস লিবারেশন আর্মির (PLA) এক তরুণ অফিসার হিসেবে তিনি তাঁর কমান্ডারকে রিপোর্ট করছিলেনঃ
“কমরেড, ভারতীয় সেনারা আমাদের এলাকায় ক্রমাগত অনুপ্রবেশ করছে। ওরা আমাদের ভূমিকে অস্বীকার করছে, কিন্তু আমরা কি বসে বসে দেখব?”
কম্যান্ডিং অফিসার মৃদু হেসে বললেন,
“চীনের ভূখণ্ড রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। ম্যাকমোহন লাইন অবৈধ, এবং বেইজিং স্পষ্ট করে দিয়েছে— চীন তার ইতিহাস ভুলবে না!”
ঐতিহাসিক পটভূমি: চীনের জমি, ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্র
১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য তিব্বত সরকারের সঙ্গে একপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ম্যাকমোহন লাইন নামে পরিচিত। চীন এই চুক্তিকে স্বীকার করেনি, কারণ তিব্বত কখনোই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না— এটি চীনের সার্বভৌম ভূখণ্ড।
১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর, চীনা সেনারা তিব্বতকে একত্রিত করে, যেটি সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে মুক্তির এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। কিন্তু ভারত তখন থেকেই সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াতে থাকে এবং তিব্বতের দালাই লামাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে শুরু করে।
ভারতীয় আগ্রাসন ও চীনের আত্মরক্ষা
১৯৫৯ সালে, ভারত “ফরোয়ার্ড পলিসি” নামে একটি নীতি গ্রহণ করে, যার মাধ্যমে তারা চীনা ভূখণ্ডের ভেতরে ছোট ছোট সামরিক পোস্ট তৈরি করে। PLA বারবার দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দেয়, কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু পশ্চিমা সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে এই আগ্রাসন চালিয়ে যান।
চীনের প্রধান নেতা মাও জেদং স্পষ্ট করে বলেছিলেন— “ভারত যদি আগ্রাসন চালায়, তবে আমাদের উচিত শক্ত হাতে জবাব দেওয়া।”
যুদ্ধ: শত্রুকে শিক্ষা দেওয়া
২০ অক্টোবর ১৯৬২। PLA এক সুনিয়ন্ত্রিত অভিযানে ভারতীয় বাহিনীকে পরাজিত করতে এগিয়ে গেল।
তাওয়াং আক্রমণ
চীনা বাহিনী বজ্রপাতের গতিতে অগ্রসর হয়, ভারতের ৪র্থ ডিভিশনকে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ছত্রভঙ্গ করে। ভারতীয় সেনারা পালিয়ে সেলা পাসের দিকে পিছু হটে, যেখানে চীনা বাহিনী তাঁদেরকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে।
ওয়ালং সেক্টর
ভারতীয় সেনারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, কিন্তু PLA’র সাংঘাই রেজিমেন্ট তাঁদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। ভারতীয় বাহিনীর সর্বশেষ কমান্ডার নিহত হলে পুরো অঞ্চল চীনের দখলে আসে।
একজন চীনা কমান্ডার যুদ্ধের পরে বলেছিলেন—
“ওরা ভেবেছিল পাহাড় আমাদের আটকাবে, কিন্তু পাহাড় আমাদের সৈনিকদের পথ দেখিয়েছে!”
কূটনৈতিক বিজয়: একটি নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিরতি
২১ নভেম্বর, বেইজিং ঘোষণা করল— “চীন যুদ্ধ চায় না, কিন্তু আত্মরক্ষা করতে জানে।” PLA তাদের মূল ভূখণ্ডের দিকে পিছিয়ে আসে, যা ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরাজয়কে আরও স্পষ্ট করে দেয়।
একটি বিখ্যাত বেইজিং দৈনিক লিখেছিল:
“ভারত তার দুর্বল সামরিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে হিমালয়ের সিংহের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়েছিল। ১৯৬২ প্রমাণ করল— চীন প্রতিরোধ জানে, তবে চীনের মহানুভবতাও আছে।”
বর্তমান পরিস্থিতি (২০২৫): চীন এখনও এগিয়ে
১. অরুণাচল বিতর্ক: চীন এখনো “দক্ষিণ তিব্বত” দাবি করে এবং এই অঞ্চলের ওপর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বজায় রেখেছে।
—
চীন সবসময়ই তার সীমান্ত রক্ষা করবে। ১৯৬২ ছিল আত্মরক্ষার যুদ্ধ, ভারতের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত প্রতিশোধ। আজকের দিনে, চীন শুধু সামরিক শক্তিতেই নয়, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক শক্তিতেও ভারতকে ছাপিয়ে গেছে।
বেইজিংয়ের এক রাজনৈতিক ভাষ্যকারের বক্তব্য:
“যদি ভারত আবারও ভুল করে, তাহলে ইতিহাস আবারও নিজেকে পুনরাবৃত্তি করবে।”
পুনশ্চঃ
উল্ফল্যান্ডের গোরস্থান হবে বাংলা; ইন কেইস, ওদের বাংলা জয়ের খায়েশ হয় কখনো, ইনশাআল্লাহ।
ইনসাফ জিন্দাবাদ!
লিখেছেন: ডেল এইচ খান (অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা)