আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাদের সর্বশেষ অস্ত্র প্রয়োগ করা শুরু করেছে। প্রো-প্যালেস্টাইনি মিছিলে যোগ দেয়ায় এবং প্যালেস্টাইন ইস্যুতে ভয়েজ রেইজ করার কারনে আমেরিকা প্রায় ১৫০ জন বিদেশী শিক্ষার্থীকে দেশ থেকে বহিষ্কার করছে । এর মধ্যে হার্ভার্ড, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়ার মত টপ আইভি লীগ স্কুলের শিক্ষার্থীও আছে।
তারা আরও বলছে এখন থেকে ভিসা এপ্লিকান্টদের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট চেক করবে। সেখানে এইসব নৃশংস আচরণ নিয়ে কিছু বলা আছে কিনা তা তারা চেক করবে। মানে যদি তারা দেখতে পায় মানুষ হিসেবে আপনার বিবেকটা জাগ্রত, তাহলে আপনি তাদের দৃষ্টিতে বিপদজনক !!
আমেরিকার অর্থনীতি, টেক ইন্ডাস্ট্রি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে এই ইমিগ্র্যান্ট এবং ফরেন স্টুডেন্টদের ভূমিকা অনেক। কয়েকটা স্ট্যাট শেয়ার করলে বুঝতে পারবেন
– ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার শ্রমবাজারে ১৮% কর্মীই ইমিগ্রান্ট, যা প্রায় ২৯ মিলিয়ন মানুষ।
-ইমিগ্রান্টরা বছরে ২ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক উৎপাদনে অবদান রাখে
– ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে,প্রতি ৫টি ব্যবসার ১টি ইমিগ্রান্টদের মালিকানাধীন।
– ২০২২-২৩ সালে, ১ মিলিয়নের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছে
-তারা tuition fees, accommodation, living expenses ইত্যাদির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার কন্ট্রিবিউট করেছে
– আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৪% থাকে STEM (Science, Technology, Engineering, Math) বিষয়ে
-আমেরিকায় প্রতিটি ১০ জন STEM PhD এর মধ্যে প্রায় ৪ জনই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী।
– আমেরিকার স্টার্টআপগুলোর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রতিষ্ঠাতা ইমিগ্রান্ট।
-Fortune 500 কোম্পানির মধ্যে ৪৪% কোম্পানি ইমিগ্রান্ট বা তাদের সন্তানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
-Google, Tesla, Intel, eBay – এসব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা ইমিগ্রান্ট।
পশ্চিমে পড়াশোনা, নাগরিকত্ব, এবং সেই ‘স্বপ্নের জীবন’—এসব ছিল তাদের সফট পাওয়ারের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র । তারা গনতন্ত্র এবং মানবাধিকার চ্যাম্পিয়ন। তাদের দেশে ফ্রিডম অফ স্পিচ আছে এসব মূলা দিয়ে এতদিন তারা একটা বড় অংশকে চুপ করিয়ে রেখেছিল।
এখন তারা মোটামুটি ল্যাংটা হয়ে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর রাষ্ট্রটার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মানুষকে ক্লিয়ার মেসেজ দিয়ে দিচ্ছে যে, এই বর্বরতাকে সহ্য করতে না পারলে আমাদের দেশে আসা এবং বসবাস করার স্বপ্ন ভুলে যাও। তোমার ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন ততটুকুই যতটুকু আমার সেটা করা মোরালিটির সাথে এলাইন করে। এগুলো মানতে পারলে আসো, না মানতে পারলে আইসো না ।
এর ইমপ্যাক্ট সিগ্নিফিকেন্ট । আমাদের মত থার্ড ওয়ার্ল্ড দেশগুলো থেকে পশ্চিমা দেশগুলোতে পাড়ি জমায় মূলত লাইফ-স্টাইল, ফ্রিডম অফ স্পিচ, কোয়ালিটি অফ লাইফ, ভয়ডরহীন একটা পরিবেশের জন্য। আপনি যখন তাকে বুঝায় দিচ্ছেন যে তোমাকে এখন এই জায়গায় ভয় পেয়ে থাকতে হবে, কথা-বার্তা চিন্তাভাবনা করে বলতে হবে, অন্যথায় দেশে ফেরত যাবা এটার ফলে অনেক গায়রতসম্পন্ন মানুষজন এই রাষ্ট্রগুলোতে যাবার আগে কয়েকবার ভেবে নিবে।
আমেরিকার মত দেশগুলো আরো উন্নত হচ্ছিল এবং আমাদের মত দেশগুলো আরো গরীব হচ্ছিল এই ব্রেইন ড্রেনের কারনে। আপনি চিন্তা করেন, দেশের ট্যাক্সপেয়ারদের টাকায় পড়াশোনা করে বুয়েট, আইবিএ, ঢাবি বা অন্যান্য টপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টপ শিক্ষার্থীদের কয়জন আল্টিমেটলি দেশে থাকে । বাংলাদেশের এত ঝামেলার মধ্যে দিয়ে কেউ যেত চাইতো না, কেউ স্ট্রাগল করতে চায় না । তারা বেটার অপশন এবং অপারচুনিটির জন্য দেশের বাইরে চলে যায়। সো এই লাইফ-স্টাইলের মূলা দিয়েই আল্টিমেটলি এই পশ্চিমা সভ্যতা থ্রাইভ করছিল। এই মেধাবী মানুষগুলো চলে যাওয়াতেই বাংলাদেশের মত দেশগুলোর সমস্যা আরও বাড়ছিল।
আমার পার্সোনাল কানেকশনে এমন অনেক মানুষ ছিল যারা গুলশানের মত জায়গায় লাইফ-স্টাইল এফোর্ড করতে পারতো, দেশের টপ স্কুল, টপ মেডিকেল ফ্যাসিলিটি এফোর্ড করার সামর্থ্য ছিল। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য দেশ ছেড়ে চলে গেছে। কারন, হাসিনার আমলে এটা বন্ধ ছিল। নিজের মত প্রকাশ করতে পারা অনেক বড় একটা ব্যাসিক হিউম্যান ব্যাসিক নিড।
আপনি যদি আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে বলতে বাধ্য হোন প্যালেস্টাইনে যা হচ্ছে তা ঠিক, তাহলে হয় আপনাকে পুরোপুরি শয়তান হতে হবে অন্যথায় নিজের আত্নাকে মেরে ফেলতে হবে।
কিছুদিন আগে মাসিক ১০ হাজার ডলার বেতন পাওয়া মাইক্রোসফটের এমপ্লয়ী ইবতিহাদ আবোউসাদ মাইক্রোসফটের এক প্রেজেন্টেশন চলাকালে ইজরায়েলকে সাহায্য করার জন্য মাইক্রোসফটকে ধুয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, তাঁর ১০ ডলারের চাকরি চলে গেছে। বাট সে গুনে নাই ।
গতকাল মাইক্রোসফটের আরেক এমপ্লয়ী ভারতীয় বংশভূত ভানী আগারওয়াল মাইক্রোসফটের আরেক ইভেন্টে ইজরায়েলী আগ্রাসনের প্রতিবাদ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আসছে।
অর্থাৎ, মানুষ এই চাকরি গুনছে না, লাইফ-স্টাইল গুনছে না । এরা এখন সংখ্যায় অল্প। বাট সামনে এদের সংখ্যা যত বাড়বে তত এই রাষ্ট্রগুলোর জন্য বিপদ বাড়বে।
এত ভয়ংকরতম বীভৎস দিনগুলোর মাঝে আমি কেমন যেন আশার আলো দেখতে পাচ্ছি ।
আমি দেখতে পাচ্ছি, পশ্চিমাদের মিথ্যা কাঁচের দেয়ালে গড়ে উঠা মিথ্যা সভ্যতার অসৎ দেয়ালটা ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে। মানুষের লাইফ-স্টাইল চলে যাবার ভয় ভাঙ্গতে শুরু করেছে।
হ্যাঁ, হয়ত খুব দ্রুত হয়ত হবে না। কিন্তু প্রসেসটা শুরু হয়েছে।
পুরো বিশ্বের জন্য একটা নতুন ওয়ার্ল্ড অর্ডার আসছে।
ইনশাআল্লাহ