আমাদের সমাজে অনেক প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো—রাতে নখ কাটা, চুল ছাঁটা কিংবা আঙুল ফোটানো নিষিদ্ধ বা অশুভ। কিন্তু আসলেই কি এসব ধারণার কোনো ধর্মীয় বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? নাকি এগুলো নিছক কুসংস্কার? আসুন, ইসলাম ও বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি পর্যালোচনা করি।
পরিচ্ছন্নতা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত নখ কাটা, গোসল করা এবং পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে।”
(ফাইজুল কাদির, হাদিস-৩০৬৫)
কিন্তু তিনি কখনোই নির্দিষ্ট করে বলেননি যে নখ কাটতে হবে দিনের বেলায় বা রাতে তা নিষিদ্ধ। ইসলামিক গবেষক ও আলেমরা একমত যে, রাতের বেলা নখ কাটা, আঙুল ফোটানো বা এ ধরনের কোনো দৈনন্দিন অভ্যাস নিষিদ্ধ নয়। কোরআন-হাদিসে এমন কোনো বিধিনিষেধ নেই।
তাহলে কেন এই ধারণা প্রচলিত হলো?
প্রাচীনকালে বিদ্যুৎ ছিল না, তাই রাতে নখ কাটতে গিয়ে হাত কেটে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। সেই সময়ের মানুষজন নিজেদের নিরাপত্তার জন্য রাতে নখ কাটা থেকে বিরত থাকতেন, যা ধীরে ধীরে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে।
আঙুল ফোটানোর ক্ষেত্রেও অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কেউ মনে করেন, এটি শারীরিক ক্ষতি করে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, স্বাভাবিক মাত্রায় আঙুল ফোটানো ক্ষতিকর নয় এবং এটি হাড় বা জয়েন্টের কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কারণ হয় না।
কোনো কিছুকে অশুভ বা নিষিদ্ধ মনে করার আগে আমাদের উচিত তার ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি যাচাই করা।
রাতের বেলা নখ কাটা বা আঙুল ফোটানো নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত, এবং বৈজ্ঞানিকভাবেও নিরাপদ। তাই অযথা কুসংস্কার মেনে না চলা বরং যুক্তিসঙ্গত ও সচেতন চিন্তা-ভাবনাই হওয়া উচিত আমাদের পথপ্রদর্শক।
পরিচ্ছন্ন থাকুন, কুসংস্কার থেকে দূরে থাকুন!