একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, সুখ বয়সের সাথে বৃদ্ধি পায় এবং এটি তরুণ বয়সে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাচ্ছে না, যা প্রচলিত ধারণার বিপরীত।
অনেকদিন ধরে বিশ্বাস করা হতো যে সুখ একটি বক্ররেখা অনুসরণ করে: এটি শৈশবে বেশি থাকে, মধ্যবয়সে কমে যায় এবং পরে আবার বার্ধক্যে বাড়ে।
কিন্তু এখন এই ধারণাটি পরিবর্তিত হতে পারে।
নতুন এক গবেষণাপত্র, যা ছয়টি ইংরেজিভাষী দেশের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, দেখিয়েছে যে বর্তমান তরুণরা আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক কম সুখী।
জাতিসংঘের অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (NBER)-এ প্রকাশিত হয়। গবেষণাটি সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী জিন টুয়েঙ্গি এবং ডার্টমাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ডেভিড জি. ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার যৌথভাবে পরিচালনা করেন। তারা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।
অন্য অঞ্চলগুলোর গবেষণাও ইঙ্গিত দেয় যে এই প্রবণতা বিশ্বব্যাপী সত্য হতে পারে।
গবেষকদের মতে, ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বিশেষভাবে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তারা মানসিকভাবে বেশি চাপে থাকছেন, যা মাত্র কয়েক বছর আগের তরুণদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
অন্যদিকে, প্রবীণদের মধ্যে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনের প্রতি সন্তুষ্টি বাড়ছে।
এই পরিবর্তন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, কারণ তরুণ প্রজন্ম মহামারী পরবর্তী পৃথিবীতে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
গবেষণা অনুসারে, তরুণদের সুখ কমার অন্যতম প্রধান কারণ স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার।
গবেষক ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার বলেন, “ইন্টারনেটই প্রধান কারণ, অন্য কিছু এই তথ্যের সাথে খাপ খায় না।”
২০২৪ সালের Pew Research জরিপে দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ আমেরিকান কিশোর-কিশোরী তাদের স্মার্টফোন ছাড়া বেশি শান্ত ও সুখী অনুভব করে।
একই বছর প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ কিশোর-কিশোরীরা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম সুখী, এবং এর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করা হয়েছে।
ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ারের গবেষণা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে যে যেখানে তরুণদের স্মার্টফোন ব্যবহারের হার কম, সেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তুলনামূলক কম।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ারের আরেকটি গবেষণা “The Mental Health of the Young in Africa” দেখিয়েছে, আফ্রিকার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী কখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি, এবং এই কারণেই সেখানকার তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি তুলনামূলক কম হয়েছে।
“যেসব তরুণরা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার হার বেশি,” গবেষণাটি বলছে।
তবে শুধু ইন্টারনেটই নয়, তরুণদের সুখ কমার আরও কিছু কারণ রয়েছে:
২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট বলছে, বিশ্বব্যাপী ৩০ বছরের কম বয়সীদের সুখ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির পর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথম বিশ্বের ২০টি সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেছে।
গবেষকরা বলছেন, এই প্রবণতা থামাতে আরও গবেষণা এবং নীতিগত উদ্যোগ প্রয়োজন।
কিন্তু ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার খুব একটা আশাবাদী নন। তিনি বলেন, “যুবকদের সুখ কমতেই থাকছে, এবং এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে।”
তিনি সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন “ফোন থেকে দূরে থাকুন এবং অন্যদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন।”
সূত্র: আল জাজিরা