কে এই গ্রেটা থুনবার্গ? - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের পর্যালোচনায় ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধের বাজি খেলায় ট্রাম্প: বিজয় না বিপর্যয়? অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১২৫ দফা রাবি ছাত্রশিবিরের ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ট্রাম্প ভারতে নারীদের একাকী ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র আকাশপথে আঘাত, পাতালে প্রতিরোধ: ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংঘাতের এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণ মার্কিন হামলার পরও তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি: জাতিসংঘ পরমাণু সংস্থা (IAEA) ইউএস নিউজ বেস্ট গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে রাবির বড় অগ্রগতি বিএনপির গ্রুপিং দ্বন্দ্বে অতিষ্ঠ কর্মীরা; মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চেয়ে খোলা চিঠি আজ পাস হচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট

কে এই গ্রেটা থুনবার্গ?

সিনান সাবিত
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
  • ৭১ বার দেখা হয়েছে
সংগৃহীত ছবি
গ্রেটা থুনবার্গ (সংগৃহীত ছবি)

মাত্র আট বছর বয়সে ইউরোপের এক শিশু সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর বিমানে চড়বে না—কারণ, এতে কার্বন নিঃসরণ হয়। এমন একটি সিদ্ধান্ত আপনি কল্পনা করতে পারেন? সুইডেনের স্টকহোমে জন্ম নেওয়া গ্রেটা টিনটিন ইলেওনোরা এর্নম্যান থুনবার্গ এমনই এক কিশোরী, যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তুলেছেন অনমনীয় সাহস, সত্যনিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়ে।

ইতিহাসের প্রতিটি সংকটকালে কিছু দৃঢ়চেতা মানুষ আবির্ভূত হন, যাঁরা কণ্ঠে তুলে নেন প্রতিবাদের ভাষা, হৃদয়ে ধারণ করেন মানবতার দীপ্তি। গ্রেটা সেই ধারাবাহিকতারই এক উজ্জ্বল প্রতিনিধি।

২০০৩ সালের ৩ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া গ্রেটার মা মালেনা এরম্যান একজন খ্যাতনামা অপেরা শিল্পী, বাবা স্ভান্তে থুনবার্গ এবং দাদা উলফ থুনবার্গ দু’জনেই অভিনেতা। কিন্তু এই সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা গ্রেটা ছিলেন ব্যতিক্রমী। মাত্র আট বছর বয়সে প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে প্রশ্ন করেন—“এত বড় বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্ব কেন নীরব?” প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনধারাতেই আনেন বিপ্লব। পরিবারকে করেন ভেগান, বিমানে যাত্রা বন্ধ করেন, এবং পরিবেশবান্ধব জীবনধারায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন।

২০১৮ সালের আগস্টে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে, হাতে নেন একটি প্ল্যাকার্ড: ‘Skolstrejk för klimatet’ (জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট)। সুইডিশ সংসদের সামনে দাঁড়িয়ে শুরু করেন নীরব কিন্তু বজ্রনিনাদী প্রতিবাদ—যা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তরুণ-তরুণীদের আন্দোলনে।

গ্রেটার সাহসিক, সরল ও তীক্ষ্ণ ভাষা বিশ্ব নেতাদের বিব্রত করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে কোটি তরুণকে। “তোমাদের সাহস কীভাবে হল?”—জাতিসংঘের মঞ্চে উচ্চারিত এই এক কথাই বিশ্বজুড়ে শিরোনাম হয়। জলবায়ু সংকটে বিশ্ব নেতাদের উদাসীনতার বিরুদ্ধে এমন স্পষ্টবাদিতা তাঁকে বিশ্বজুড়ে ‘গ্রেটা ইফেক্ট’-এর প্রতীক করে তোলে।

এই আন্দোলনের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন, বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, আবার মুক্তও হয়েছেন। পেয়েছেন অগণিত স্বীকৃতি—টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি (সর্বকনিষ্ঠ), ফোর্বসের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় স্থান, নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন, আরও কত কিছু!

তবে তাঁর মানবিকতা কেবল জলবায়ু আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক গাজা সংকটে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন—“বিশ্ব এভাবে চুপ থাকতে পারে না। ২০ লক্ষ মানুষ যখন অনাহারে, তখন নীরবতা ভয়ংকর অপরাধ।”
এ বক্তব্যের পর, ৮ জুন তিনি ১২ জন মানবাধিকার কর্মীকে নিয়ে “ম্যাডলিন” নামের একটি ত্রাণ জাহাজে চড়ে গাজার উদ্দেশে রওনা হন। ইতালির সিসিলি থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজটি ইসরায়েলি ড্রোন ও নৌবাহিনীর দ্বারা ঘিরে ফেলা হয়। সেখান থেকেই গ্রেটা সুইডিশ সরকারের উদ্দেশ্যে পাঠান এক ভিডিও বার্তা।

গ্রেটা থুনবার্গ কেবল একজন কিশোরী নন—তিনি এক প্রজন্মের প্রতিনিধি, এক আন্দোলনের প্রতীক, এবং মানবতা ও ভবিষ্যতের পক্ষে উচ্চারিত এক অদম্য কণ্ঠস্বর। তিনি প্রমাণ করেছেন—যে পৃথিবী এক শিশুর কণ্ঠেও পরিবর্তনের প্রত্যয় খুঁজে পেতে পারে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT