বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমদানি পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন শিল্পে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এই নতুন শুল্ক নীতির ফলে, বিশেষ করে পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে।
শুল্কের বিবরণ:
সাধারণ শুল্ক: সমস্ত আমদানি পণ্যের ওপর ১০% হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
নির্দিষ্ট দেশগুলোর ওপর উচ্চতর শুল্ক:
চীন: ৩৪% শুল্ক, যা পূর্বের শুল্কের সাথে যুক্ত হয়ে মোট ৫৪% হয়েছে।
ভিয়েতনাম: ৪৬% শুল্ক।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ): ২০% শুল্ক।
যুক্তরাষ্ট্র ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (USFIA) এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ আমেরিকান ফ্যাশন ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। USFIA আরও উল্লেখ করেছে যে, ফ্যাশন শিল্প বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর নির্ভরশীল, এবং এই ধরনের শুল্ক সেই শৃঙ্খলে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ঘোষণার পরপরই ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, লুলুলেমন-এর শেয়ার ১০% কমে গেছে, নাইকি এবং রালফ লরেন-এর শেয়ার ৭% হ্রাস পেয়েছে, এবং টেপেস্ট্রি, ক্যাপ্রি ও PVH কর্পোরেশনের শেয়ার প্রায় ৫% কমে গেছে। এই পতন S&P 500 ফিউচারের প্রায় ৪% হ্রাসের চেয়েও বেশি।
এই শুল্কের ফলে ফ্যাশন শিল্পের সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। অনেক কোম্পানি ইতিমধ্যে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নতুন শুল্কের ফলে সেই কৌশলও ব্যর্থ হতে পারে। Nike এবং Lululemon-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো ভিয়েতনামে ব্যাপকভাবে উৎপাদন করে, এবং তারা এখন নতুন বিকল্প খুঁজছে। তবে, এশিয়ার বাইরে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া কঠিন, কারণ সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ
মার্কিনীদের হয়ে কাজ করা আফগানদের দেশত্যাগে বাধ্য করছে ট্রাম্প প্রশাসন
মার্কিন জনগণের ওপর প্রভাব:
এই নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণার ফলে পোশাকের দাম প্রায় ১৭% পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ব্যয় হয়।
বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো, যেমন LVMH, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে, বেশিরভাগ বিলাসবহুল পণ্য এখনও বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়, এবং নতুন শুল্কের ফলে তাদের ব্যয় বাড়বে। এই ব্যয় বৃদ্ধির ফলে তারা দাম বাড়াতে পারে, যা ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
Nike এবং On-এর মতো খেলাধুলার ব্র্যান্ডগুলো ভিয়েতনামে তাদের উৎপাদন কেন্দ্রীভূত করেছিল। কিন্তু নতুন শুল্কের ফলে তারা আবারও উচ্চ ব্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। তারা এখন নতুন উৎপাদন কেন্দ্র খুঁজছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক নীতির ফলে ফ্যাশন শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। কোম্পানিগুলোকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে, এবং ভোক্তাদেরও বাড়তি মূল্যের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফ্যাশন শিল্পের প্রতিটি স্তরে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
আমাদের পথ চলায় সঙ্গী হন আপনিও: