যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করা ভারতীয় অভিবাসীদেরকে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে সামরিক বিমানে করে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ফেরত আসা অভিবাসীরা জানিয়েছেন, তাদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে বিমানযাত্রা করতে হয়েছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। বিমান অবতরণের পর অমৃতসরে তাদের শিকল ও হাতকড়া খোলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এক ভিডিওতে দেখা গেছে—
গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে ১০৪ জন ভারতীয় অভিবাসীকে পাঞ্জাবের অমৃতসরে ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে, ২০২৪ অর্থবছরে চার্টার ও বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে এক হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ভারতের বিরোধী দলগুলো এই ঘটনায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা জানতে চেয়েছে, কেন ভারত সরকার নিজস্ব উড়োজাহাজ পাঠিয়ে নাগরিকদের সম্মানজনকভাবে ফেরত আনতে পারেনি। তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি সাকেত গোখলে বলেন, “আমরা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি… তাহলে আমাদের সরকার কেন পারছে না? আমাদের তো উড়োজাহাজের অভাব নেই।”
ফেরত আসা অভিবাসীদের অনেকেই জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য তারা লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন এবং চরম দুর্ভোগ সহ্য করেছেন। তবুও তারা কোনো অপরাধ না করেও বন্দি অবস্থায় ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ
দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাটারির কারণে বিমানে ১৩ বার আগুনের সূত্রপাত
ফেরত আসা অবৈধ ভারতীয় দের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, শুধু বিমানে নয়, বাসেও তাদের একইভাবে শিকল পরিয়ে তোলা হয়েছিল। এমনকি, তাদের কোথায় নেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি।
প্রথম দফায় ফেরত আসা ১০৪ জন ভারতীয়ের মধ্যে ছিলেন—
এই ঘটনাটি সংসদে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। বিরোধী দল কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র সমালোচনা করেছে।
‘‘এইভাবে হাতকড়া পরিয়ে ভারতীয়দের কখনো দেশে ফেরত পাঠানো হয়নি। এটি অপমানজনক ও লজ্জাজনক। সরকারকে অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।’’
‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের বিবৃতি অত্যন্ত দুঃখজনক। তাকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী না মনে হয়ে বরং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধি মনে হয়েছে। এমন ঘটনার সমালোচনা না করে উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সাফাই গাওয়া লজ্জাজনক।’’
Modi with Illegal Indian Immigrant
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে জানিয়েছেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ১৫,৭৫৬ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ২,০৪২ জন এবং ২০২০ সালে ১,৮৮৯ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই) এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। ২০১২ সাল থেকে আইসিই-এর প্রত্যাবাসনের জন্য নির্ধারিত মানদণ্ড কার্যকর রয়েছে, যেখানে হাতকড়া ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, আইসিই জানিয়েছে, নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয় না। এছাড়া, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের খাদ্য, অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা জরুরি অবস্থার বিষয়েও যত্ন নেওয়া হয়। টয়লেট ব্যবহারের সময় প্রয়োজনে তাদের সাময়িকভাবে মুক্ত করা হয়।
মার্কিন সীমান্ত টহল বাহিনীর প্রধান মাইকেল ডব্লিউ ব্যাঙ্কস এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা ভারতের বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সফল হয়েছি। সামরিক বিমানের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে দূরত্বে অভিবাসী ফেরত পাঠানো হলো। বেআইনি ভাবে প্রবেশ করলে, ফেরত পাঠানো হবে।”
Leave a Reply