নোটিশ:

ঐক্যের পথে শীর্ষ ইসলামী দলগুলো

সাবাস বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৯৯ বার দেখা হয়েছে
ঐক্যের পথে শীর্ষ ইসলামী দলগুলো

বহু বছর পর গতকাল (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ এক ব্যতিক্রমী ও আশাব্যঞ্জক দৃশ্যের সাক্ষী হয়। দেওবন্দি চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ প্রায় সব ইসলামি দলের শীর্ষ নেতারা একত্রে বসেন, পারস্পরিক আলোচনা করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয়ে একমত হন। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

এমন একটি মিলনমেলা দীর্ঘদিন পর দেখা গেলেও এর স্থায়িত্ব নিয়ে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা কঠিন। তবে ইসলামি রাজনীতির মাঠে এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। ফেসবুকজুড়ে নেতাদের একত্রে বসার ছবিগুলো ঘুরে বেড়িয়েছে দিনভর; অনেকেই তা শেয়ার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবে দেখেছেন।

এই আলোচনার আয়োজন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, পীর সাহেব চরমোনাইয়ের নেতৃত্বে। অংশগ্রহণকারী দলগুলো জনবল ও জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থানীয় হওয়ায়, এই উদ্যোগের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। তাদের একত্রিত করা নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য, যা দেশের রাজনীতির প্রচলিত কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ির সংস্কৃতিতে ভিন্নধর্মী নজির স্থাপন করেছে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এদেশে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের সংস্কৃতি একেবারে নতুন নয়। আশির দশকে হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে, নব্বইয়ে নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী আন্দোলনে, ২০০১ সালে ফতোয়াবিরোধী রায় বা ২০১৩ সালে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আহ্বানে—সব ক্ষেত্রেই একাত্মতা দেখা গেছে। তবে গত এক দশকে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ইসলামি দলগুলো ফের কাছাকাছি আসছে। একাধিক বড় দল, বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৃহৎ ঐক্য গঠনের উদ্যোগ এখন দৃশ্যমান।

আগামী নির্বাচনে একটি প্রতীক বা ব্যালট বাক্সে ইসলামি সব দলকে একত্রিত করার আলোচনা চলছে। গতকালের বৈঠক সেই সম্ভাবনাকে আরো জোরালো করেছে। তবে এই ঐক্যের পথ সহজ নয়। নেতৃত্ব, মতাদর্শ ও পারস্পরিক সহনশীলতার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় ভোগেন, এমনকি সামান্য ভিন্নমতেও পরস্পরের বিরোধিতায় নেমে পড়েন।

তবুও, যদি দলগুলো ব্যক্তি ও দলের সীমাবদ্ধতা পেছনে ফেলে দেশ ও ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, তাহলে তারা জাতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। মানুষের মধ্যে আলেম-উলামার প্রতি ভালোবাসা থাকলেও ভোট প্রদানের সময় আস্থার সংকট দেখা যায়, কারণ তারা মনে করেন ইসলামি প্রার্থী জিতবেন না। কিন্তু একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম সেই আস্থার ঘাটতি কাটিয়ে তুলতে পারে।

সার্বিকভাবে, আসন্ন নির্বাচন ইসলামি দলগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে—যদি তারা ঐক্য ধরে রাখতে ও সমঝোতার ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়। সেটাই হবে তাদের প্রকৃত সাফল্যের সূচনা।

আরও পড়ুন :

রানা প্লাজা ট্রাজেডির এক যুগ : বিচার ও ক্ষতিপূরণে দীর্ঘসূত্রতা

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT