জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে আবার আলোচনার টেবিল ত্যাগ করল বিএনপি। সোমবার (২৮ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংলাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০তম দিনে বৈঠকের শুরুতেই বিএনপির নেতারা আলোচনায় অংশ না নিয়ে বৈঠক ত্যাগ করেন। প্রস্তাবিত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্যের কারণেই তারা এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকের শুরুতেই আলোচনায় উঠে আসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাবরক্ষকের কার্যালয় এবং ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে পৃথক ও স্বচ্ছ নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব। এসব বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে মতৈক্যে না পৌঁছানোয় তারা আলোচনায় না থেকে বৈঠক ত্যাগ করে। যদিও বিএনপি একে ‘ওয়াকআউট’ বললেও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিষয়টিকে ‘বর্জন’ নয় বলে দাবি করেছেন। তার ভাষায়, বিএনপি তাদের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ওই বৈঠকে অংশ নেয়নি। তবে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায়, বিশেষ করে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহণের কথা রয়েছে দলটির।
সংলাপের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো মীমাংসিত হয়নি, সেগুলো নিয়ে এই পর্বে আলোচনা চলছে। তার মতে, ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে এবং কমিশনের পক্ষ থেকে বহুবার প্রাথমিক প্রস্তাবনায় পরিবর্তন এনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার ভাষায়, “আমরা এমন একটি ঐতিহাসিক দলিল গঠন করতে চাই, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পথরেখা নির্ধারণে সহায়ক হবে।” এখন পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, ২৩ জুলাই রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে জাতীয় ঐকমত্য সংলাপের আরেক অধিবেশন থেকে প্রতীকী ওয়াকআউট করেছিল তিনটি বামধারার দল—সিপিবি, বাসদ ও জাসদ। ওইদিন অধিবেশন শুরু হতেই সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান এবং ১০ মিনিটের প্রতীকী ওয়াকআউটের ঘোষণা দেন। এতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
দুই পর্যায়ে পরপর রাজনৈতিক দলগুলোর এমন প্রতিবাদ ও অংশগ্রহণের টানাপোড়েন কমিশনের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে।