যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অবস্থান পরিষ্কার নয়।
জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন কর্মকর্তাদের দেওয়া বক্তব্য বিশ্বজুড়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এই সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাঁকে ওয়াশিংটন ডিসির কাছে অ্যান্ড্রুস বিমানঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তবে এই ঘটনা ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে দেওয়া বক্তব্য, যা ইউরোপের মিত্রদের বিস্মিত করেছে।
হেগসেথ বলেন, রাশিয়া দখল করা ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করা ‘অবাস্তব’ এবং ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনাও বাস্তবসম্মত নয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ইউরোপীয়দের ওপর নির্ভর করবে, মার্কিন সেনাদের ওপর নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর এই বক্তব্যের ফলে ইউক্রেনকে চাপে রেখে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
হেগসেথের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা ওঠার পর তিনি নিজ অবস্থান কিছুটা বদলান। তিনি জানান, শান্তি আলোচনার সব বিকল্পই ট্রাম্পের টেবিলে রয়েছে এবং দর-কষাকষিতে সেগুলো ব্যবহার করা হবে। তবে তাঁর এই অবস্থান পরিবর্তন ইউরোপের বিভিন্ন রাজধানীতে ইতিমধ্যেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, মিউনিখ সম্মেলনে মার্কো রুবিওর উপস্থিত হতে দেরি হলেও তাঁর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘টেকসই নিরাপত্তাকাঠামো’ তৈরির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে শান্তিচুক্তি বিষয়ে রুবিও ও হেগসেথের অবস্থানে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সামরিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে রাশিয়াকে চুক্তিতে রাজি করানোর কথা বলেছেন, সেখানে হেগসেথ মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দেওয়া বক্তব্যে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মিউনিখ সম্মেলনে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা ইউক্রেন-রাশিয়া চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল কী হতে পারে, সে সম্পর্কে ইঙ্গিত দিলেও তা কখনো কখনো বিভ্রান্তিকর ও পরস্পরবিরোধী মনে হয়েছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মতবিরোধের কারণে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অপসারণের ঘটনা ঘটেছিল। এবার তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্য বেশি স্পষ্ট। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ, যার সরকারি বা সামরিক উচ্চপদস্থ নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা নেই, তিনি মূলত ফক্স নিউজের উপস্থাপক ছিলেন এবং ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়নে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়া এখনো অনিশ্চয়তায় ঘেরা। ট্রাম্প ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ প্রয়োগ করছেন কি না, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এই কৌশলে অনিশ্চিত ও আক্রমণাত্মক অবস্থান গ্রহণ করে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে এটি ভুল বোঝাবুঝি এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ এনে পরবর্তীতে তাঁর প্রশাসন তা সংশোধনের চেষ্টা করলেও ট্রাম্প আবারও তাঁর আগের বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
অন্যদিকে, মার্কো রুবিও তাঁর অধীনস্থ পররাষ্ট্র দপ্তরকে ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও মিউনিখ সম্মেলনে হেগসেথের বক্তব্য সেই প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে গেছে। এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে কে আসলেই নিয়ন্ত্রণ রাখছেন, সে প্রশ্ন জোরালো ভাবে উঠে এসেছে।
আরো পড়ুনঃ
Leave a Reply