প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি জমায় কানাডায়। কেউ পড়াশোনার জন্য, কেউ পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি নিয়ে, কেউবা রাজনৈতিক আশ্রয় বা কাজের সুযোগের খোঁজে। তবে অনেকেই স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়লেও বাস্তবতায় এসে হতাশায় ভোগেন।
সিলেটের যুবক সুমিত আহমদ তাদেরই একজন। পাঁচ মাস আগে কানাডার টরন্টো শহরে এসেছেন তিনি। প্রতিদিনই কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ড্যানফোর্থে, যেখানে প্রতিদিন দু’বার করে যাওয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো কাজের সন্ধান পাননি।
সুমিত বলেন, “সরকার যে ৭০০ ডলারের মতো ভাতা দেয়, আপাতত সেটা দিয়েই কোনোভাবে দিন কাটছে। কিন্তু কাজ ছাড়া বেশিদিন চলা সম্ভব নয়।”
অভিবাসনের পেছনের বাস্তবতা
কানাডা বিশ্বে অন্যতম অভিবাসীবান্ধব দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর তিন থেকে চার লাখ মানুষ বিভিন্ন দেশে থেকে অভিবাসী হয়ে সেখানে পাড়ি জমান। কেউ স্থায়ী বাসিন্দা (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স) হিসেবে, কেউ শিক্ষার্থী হিসেবে, কেউ রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য কিংবা কেউবা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে।
তবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কানাডা আসা অনেকের জন্যই বাস্তবতা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই দেশে থাকা দালাল বা এজেন্টদের প্রতারণার শিকার হন। কাজের নিশ্চয়তা না থাকায় অনেককে এসে পড়তে হয় চরম হতাশায়। সুমিত আহমদের অভিজ্ঞতা সে চিত্রকেই সামনে আনে।
কীভাবে পাওয়া যায় কানাডার ওয়ার্ক ভিসা?
বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, কানাডার ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে সরাসরি দেশটিতে গিয়ে কাজ খুঁজে নেওয়া সম্ভব। অথচ বাস্তবে বিষয়টি এতটা সহজ নয়।
একজন বিদেশি কর্মীকে নিয়োগ দেওয়ার আগে কানাডার প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রমাণ করতে হয় যে, তারা স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত কর্মী খুঁজে পাচ্ছে না। এ জন্য তাদেরকে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। ব্যর্থ হলে তখন তারা সরকারের অনুমতি নিয়ে বিদেশ থেকে কর্মী আনার জন্য আবেদন করতে পারে।
কানাডায় যাওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা দরকার:
১. বৈধ পাসপোর্ট ও সঠিক ভিসা:
কানাডা যাওয়ার উদ্দেশ্য অনুযায়ী যথাযথ ভিসা থাকতে হবে—পড়াশোনা, কাজ, ভ্রমণ বা স্থায়ী বসবাসের জন্য।
২. শিক্ষাগত যোগ্যতা:
যে প্রোগ্রামে আপনি যাচ্ছেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় ডিগ্রি থাকা জরুরি।
৩. ভাষা দক্ষতা:
IELTS, TOEFL কিংবা ফরাসি ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন হতে পারে।
৪. কাজের অভিজ্ঞতা:
বিশেষ করে যারা ওয়ার্ক পারমিট বা ইমিগ্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করছেন, তাদের পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ।
৫. আর্থিক সক্ষমতা:
কানাডায় প্রাথমিক অবস্থায় জীবনযাপন চালানোর মতো আর্থিক সংস্থান থাকতে হবে।
৬. অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা:
মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে।
কোন কোন ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম রয়েছে:
Express Entry
Provincial Nominee Program (PNP)
Family Sponsorship Program
পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানাডায় যাওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে, নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য জেনে এবং সরকারি ওয়েবসাইট ঘেঁটে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। পাশাপাশি অভিজ্ঞ পরামর্শদাতাদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে