নোটিশ:
শিরোনামঃ
সরাসরি ট্রেন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ: লালমনিরহাটে আন্দোলন তীব্র উপদেষ্টাদের এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪০, আহত ১২০০, নেপথ্যে ইসরায়েল জাবিতে হামলার ঘটনায় ২৫৯ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কৌশল: ‘মব’ সৃষ্টি করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য আল-জাজিরাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, বাংলাদেশে ‘দ্বিতীয় ’স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের দায়িত্বে আছেন আল-জাজিরায় ড. ইউনূস: শেখ হাসিনাকে থামাতে পারবেন না মোদি মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত ফ্রান্সে মসজিদে হামলা, নামাজরত মুসল্লিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ঢাবি শিক্ষার্থীর লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ক্লাসে যাওয়ার দাবিতে প্রতীকী অনশন

আব্বাসী হুজুরের প্রতি খোলা চিঠি লিখলেন রাখাল রাহা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫
  • ৩৩ বার দেখা হয়েছে
রাখাল রাহা,আলেম সমাজ, এনসিটিবি, আল্লাহর নামে কটূক্তি, ফেসবুক মন্তব্য, ধর্মীয় বিশ্বাস, আইনানুগ ব্যবস্থা, ধর্মীয় অনুভূতি, সামাজিক উত্তেজনা, জাতীয় স্থিতিশীলতা, ধর্মীয় বিভাজন, শিক্ষাক্রম সংশোধন, ইসলামী সংস্কৃতি, জাতীয় মূল্যবোধ, আদিবাসী গ্রাফিতি, প্রচলিত আইন, ধর্মীয় আঘাত, কঠোর আইন, আল্লামা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী, প্রফেসর ড. এবিএম হিজবুল্লাহ, মুফতি মুহা. কাজী ইব্রাহীম, মাওলানা লিয়াকত আলী,আলেম সমাজের উদ্বেগ
রাখাল রাহা (ফাইল ফটো)

ঠিকানায় খালেদ মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসির সাম্প্রতিক টকশোর প্রেক্ষিতে তাঁর প্রতি খোলা চিঠি  লিখেছেন রাখাল রাহা। এই চিঠি তিনি গত ০৩ মার্চ নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে প্রকাশ করেন। চিঠিটি সম্পূর্ণ তুলে ধরা হলো:

আমার সালাম গ্রহণ করুন। কিন্তু আমি কি আপনাকে সালাম দিতে পারি, যে আমাকে উন্মুক্ত হত্যা করতে চেয়েছেন এবং লাখো মানুষকে হত্যার আহ্বান জানিয়েছেন!—তবু পারি। কারণ আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মানুষ। তাহলে আমি নিধর্মী কেন? বলতে পারেন আপনাদের মতো কিছু ধার্মিক মানুষের কারণে।
মনে পড়ে ছোটবেলায় বাবা ও কাকার সাথে আমিও মসজিদে যেতাম। পুরো রমজানের রোজাও রেখেছি কয়েকবার। আমাদের পরিবার ফুরফুরা শরীফের মুরিদ ছিল। সেখান থেকে হাফেজ সাহেব আসতেন, কয়েকদিন থাকতেন। আমাদেরকে তাঁর সেবাযত্ন করতে হতো—ওজুর পানি দেওয়া, খাবার পরিবেশন করা, বিছানা পেতে দেওয়া, পুকুরঘাটে গোসলের সময় কাপড় হাতে দাঁড়িয়ে থাকা, ইত্যাদি। অনেক বয়স ছিল তাঁর—ধবধবে ফর্সা, সাদা লম্বা দাড়ি, একটু সামনের দিকে ঝুঁকে আস্তে আস্তে হাঁটতেন। কি নরম করে কথা বলতেন, কিভাবে তাকাতেন, আর কেমন শিশুর মতো হাসতেন! ছোট বয়সে আমরা ভাবতাম, নবীজী বোধহয় এরকম ছিলেন।
কিন্তু প্রকৃত বিশ্বাস বা ভক্তি আসলে নামাজ বা রোজা নয়, কারো মুরিদ হওয়াও নয়। তাই জগতে অসংখ্য উদ্ধত-অহঙ্কারী মানুষ শুধু নয়, অনেক অসৎ আর খুনী-বদমাইশও পাওয়া যাবে, যারা ধর্মকর্ম করে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার সৃষ্টিকর্তাকে কিভাবে পায়, কিভাবে হারায়—তা সে জানে না। তাই কেন জানি, স্কুল পেরোনোর আগেই আমি আমার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। আশেপাশের মানুষের সাথে বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে তর্ক শুরু করি। কিন্তু তখনও বোধহয় সময়টা এখনকার মতো এতোটা পতিত হয়নি। হলে, নাস্তিক হত্যা ওয়াজিব হয়ে যেতো! হয়তো আর ইহজগতে বিশ্বাসে ফেরা হতো না!
আমার এ পরিণতি দেখে একবার আমার এক শ্রদ্ধাভাজন বড়ো ভাই এক সাধুর কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, ও আল্লা-খোদা কিছুই মানে না। এ কথা শুনে তিনি হো হো করে হেসে বললেন, ও তো ওর জায়গাতেই আছে। চারপাশের এতো অন্যায় আর অরাজকতা দেখে এই বয়সে ও কেমন করে মানবে? এই বলে আমার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, আষাঢ় মাস, বুঝলে ভায়া, তাই এতো আগাছা; মালির কোনো দোষ নেই। জগতের দিকে তাকাও, দেখো এর মাঝেও ঈশ্বর তোমাকে কি সুন্দর বাঁচিয়ে রেখেছেন।
অনেক কিছু ভুলতে পারি, কিন্তু ছোটবেলার সেই হাফেজ সাহেব আর তারুণ্যের সেই সাধু বাবার কথা কখনো ভুলতে পারি না।
* * *
এরপর বিশ্বাস যখন ফিরে পেলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন প্রায় শেষ করেছি। কিভাবে পেলাম জানি না, কিন্তু বুঝতে পারলাম আমার সকল সত্তা জুড়ে তিনি আছেন, সকল কিছুতেই তাকে অনুভব করি। তবে ধর্মকে আর ফিরে পেলাম না, কোনো ধর্মকেই না। অথচ আমার পরিবারের সবাই প্র্যাকটিচিং মুসলিম। নামায কেউ সাধারণত কাযা করেন না। বাবা-মা-চাচা-চাচী সবাই হজ্জ বা ওমরা করেছেন। আমার স্ত্রী একান্ত ধর্মপ্রাণ, সেও কখনো নামায কাযা করতে চায় না। বিয়ের পর একটা ভালো কোরান শরীফ চাওয়ায় আমি একবার কাঁটাবন, বায়তুল মোকাররম, বাংলাবাজার খুঁজে সবচেয়ে সুন্দর কোরান শরীফটা তাকে এনে দিয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সুন্দর দুটো সন্তান দিয়েছেন। ওদের দিকে তাকালেই আমার সৃষ্টিকর্তার কথা মনে পড়ে। ওরা ওদের মতো করে বড়ো হচ্ছে। আমি বা আমার স্ত্রী কেউ ওদের বিশ্বাস নিয়ে চিন্তিত না। ওরা ওদের মতো করে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাক, সবসময় এই প্রার্থনা করি। ওরাও মাঝে মাঝে নামায পড়ে, মাঝে মাঝে রোজা করে। মাঝে মাঝে আমাকেও রোজা রাখার কথা বলে। ওদের সাথে মাঝে মাঝে আমিও রাখি। কিন্তু রোজা রাখি বা না-রাখি, আমি ইফতারী পরিবেশন না করলে নাকি ওদের রোজা ভালো হয় না। নামায পড়ি বা না-পড়ি, আমরা সবসময় সপরিবারে ঈদগায় গিয়ে ঈদের নামাযে অংশগ্রহণ করি। বহু বছর পর আজ থেকে যে রোজা শুরু হলো, তা আমাদের জন্য আলাদা। তবু শুভ রমজান।
* * *
এই যে সব ফিরিস্তি এখানে হাজির করছি, তা ব্যক্তির একান্তই নিজস্ব, যার সকলই সৃষ্টিকর্তা জানেন, এবং যা এখানে হাজির করিনি তা-ও তিনি জানেন। কিন্তু আপনাদের মতো ধার্মিকের কাছে এগুলো অন্তরের একান্ত বিষয় নয়, দেখিয়ে-দেখিয়ে প্রমাণ করার বিষয়; চিৎকার করে, হুঙ্কার দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়। দুঃখজনক হচ্ছে, আমার বিশ্বাস আমাকে এ ধরণের কাজে বাধা দেয়; এবং আরও দুঃখজনক হচ্ছে আমার বিশ্বাস এ সকল হুঙ্কারে ভয় পেতেও শেখায় না। আর আমি জানি, কেন আপনারা এরকম; কেন আপনাদেরই পূর্বপুরুষ কয়েকশত বছর আগে এই ভূভাগের মানুষের জীবন ইসলামের পরশে সমৃদ্ধ করে তুলতে পেরেছিল, আর কেনই-বা আজ সেই তাদেরই উত্তরাধিকার আপনারা এরকম অসহিষ্ণু, অপ্রকৃতস্থ হয়ে উঠেছেন।
এর ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক-সামাজিক কারণ নিয়ে আমি অনেকদিন ধরে কম-বেশী বলি ও লিখি। এসব কারণ না বুঝে তাই যখন কেউ এদেশের মুসলমান সমাজকে আঘাত করে কথা বলে, তার প্রতিবাদে আমার যতো কথা, তা হাসিনার ফ্যাসিবাদ বিরোধী কথার চেয়ে কম নয়। পতিত ফ্যাসিবাদকালের বহু ঘটনা এর সাক্ষী। চারপাশের অসংখ্য মানুষ এর সাক্ষ্য দেবে।
* * *
তাহলে ফ্যাসিবাদ পতনের কয়েক মাস যেতে না যেতেই আমাকে নিয়ে এতো কথা, এতো ঘৃণা-নিন্দা শুরু হলো কেন?
প্রথম কারণ, দীর্ঘদিন ধরে এদেশের সাধারণ ধারার শিক্ষাকে ধ্বংস করে, বিশেষভাবে ভারতের যে অসাধারণ স্বার্থ হাসিল হয়ে চলছিল, এবং তার চক্রে পুরো দেশকে, দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে বেঁধে ফেলা যাচ্ছিল—তাকে উন্মোচন করা, প্রতিরোধ করা ও জনমত সংগঠিত করার কাজ আমি বছরের পর বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে করে গেছি। তাই জুলাই অভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে যখন সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষার একটুকু মেরামতের স্বল্পমেয়াদী দায়িত্ব মন্ত্রণালয়সহ বহুপক্ষের বাধা ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করে সম্পন্ন করলাম—এটাই হয়ে উঠলো আমাকে বিরোধিতার পেছনের কারণ। কেন আমি পারলাম? কেন আমি হাসিনা আর তার আমলাতন্ত্র ও এজেন্সী মিলে যেভাবে পাঠ্যবই নষ্ট করেছিল তার ঠিক উল্টোভাবে এখন পাঠ্যবই নষ্ট করতে বাধা দিলাম? তারপর থেকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কিছু তথ্য, কিছু অর্ধ-সত্য আর কিছু মিথ্যা মিশিয়ে নানা মাধ্যমে যা-কিছু পরিবেশন করা হয়েছে এবং এখনো কম-বেশী চলমান আছে, সেই ইতিহাস লম্বা, যা এখানে আলাপের বিষয় নয়। তার জবাব আমি ইতিপূর্বে অল্পস্বল্প দেওয়ার চেষ্টা করেছি, এবং খোদাতালা বাঁচিয়ে রাখলে আরও ভালোভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
* * *
কিন্তু এসবের ধারাবাহিকতার মধ্যেই এবারের বইমেলায় আরেকটা বিষয় আমাকে ভাবিয়ে তোলে, তা হলো সোহেল হাসান গালিবের একটা ব্যঙ্গাত্মক কবিতাকে ঘিরে সৃষ্ট কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা। আমাকে যারা জানেন তারা জানেন যে, জুলুমের বিরুদ্ধে সাধ্য অনুযায়ী কথা বলা আমার স্বভাবজাত। এটা করতে হাসিনার নাম নিয়ে, তাকে সরাসরি দায়ী করে আমার চেয়ে অধিক কথা কে বলেছে তা খুঁজে দেখতে হবে। এর জন্য হাসিনা সরকার একবার গুম করেছে, একাধিকবার গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ডাকিয়ে ক্যান্টমমেন্টে নিয়ে হয়রানি করেছে। যখন বাংলাদেশকে ওয়ার অন টেররের ক্ষেত্র বানাতে লেখক-প্রকাশকদের হত্যা করতে দেওয়া হচ্ছিল, জঙ্গি নামের নাটক চলছিল, তখনও কথা বলেছি; এবং বহুবার নানা ধরণের বিপদ থেকে বেঁচে গেছি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। সুতরাং গালিবের বিষয়টা নিয়ে কথা না বলে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
সত্যিসত্যিই গালিবের কবিতাটা আমি আগে পড়িনি। আমার ধারণা শ-খানেক মানুষও আগে পড়েনি। কিন্তু এখন কোটি মানুষের সাথে পড়তে হলো আপনাদের মতো কিছু ধার্মিকের কারণে। জানতে পারলাম, যে-কবিতা হাসিনার আমলে লেখা, যে-কবিতা নিয়ে হাসিনার আমলে কবির কল্লা চাওয়া হয়নি, হত্যাযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি, মাথার মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি, আজ সেই কবিতা নিয়ে হাসিনাকে তাড়ানোর পর কল্লা চাওয়া হচ্ছে, হত্যাযোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছে, মাথার মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, এবং এটা করা হচ্ছে সেই কবির নামে, যিনি হাসিনাকে তাড়ানোর আন্দোলনে তার জায়গা থেকে কমবেশী অংশগ্রহণও করেছেন।
গালিবের কবিতাটি পড়ার পর তার ব্যঙ্গের ভাষা নিয়ে যে কথা উঠেছে তা নিয়ে আমি আমার অবস্থান জানিয়ে লিখেছি, এবং একইসাথে যাদের সাথে মিলে ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছি, দেশী-বিদেশী প্রকল্পের শিকার হওয়া যে-মুসলিম সমাজকে নিয়ে আমি নানা ঘৃণাবাচক লেখার জবাব দিয়ে গেছি দিনের পর দিন, তাদেরকে ওউন করেই আপন জেনেই বুঝাতে চেয়েছি যে, এভাবে বিষয়টা নিরসন করা যায় না; এবং জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশে এভাবে সমাধান-ভাবনা ভাবলে সর্বনাশ হবে, দেশে-বিদেশে অনেকেই এর সুযোগ নেবে, আপনারা অনুগ্রহ করে থামুন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হলো না, এবং কবির ক্ষমা প্রার্থনার পরও তা অব্যাহত রাখা হলো।
* * *
পরিস্থিতির অসহায়ত্ব থেকে আমি গালিবের ব্যবহার করা স্ল্যাং শব্দ দুটো হাসিনার দোসর নারায়ণগঞ্জের এক ভণ্ডের মুখে বসিয়ে তার চিত্র ব্যঙ্গ করে হাইপোথেটিক্যালি বা কৃত্রিমভাবে এঁকে ফেসবুকে একটা আলোচনার সূত্রপাত করতে চেয়েছিলাম, এবং সেখান থেকে একটা গ্রহণযোগ্য উপসংহারে আসতে চেয়েছিলাম। কারণ আমি বুঝেছিলাম, রাষ্ট্র এখন অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে, তাই এ পর্যায়ে আমাদের লেখক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব অনেক। এরকম ভঙ্গুর রাষ্ট্রের মধ্যে তাদের বুঝতে হবে যে, কি করা যাবে আর কি করা যাবে না। সমাজে স্পর্শকাতরতার মাত্রা বুঝে, যা কিছু শ্রদ্ধার-সম্মানের-বিশ্বাসের বিষয়, সেগুলো নিয়ে বিবেচনা করে কথা বলতে হবে। এবং একই সাথে সেগুলো যারা ধারণ করেন বা বিশ্বাস করেন, তাদের দিক থেকেও বুঝতে হবে লেখক-শিল্পীদের ন্যূনতম স্বাধীনতার বিষয়গুলো। এ পর্যায়ে কেউ যাতে সীমালঙ্ঘন না করি, করলেও যেন তা সমাধানের একটা সহজ পথ রাখি। না হলে দীর্ঘমেয়াদে সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে।
কিন্তু যেটা ঘটলো, সেই কাল্পনিক লেখাকে অকাট্যভাবে আমিই লিখেছি, আমি এভাবেই লেখার স্বাধীনতা চেয়েছি বলা হলো; এবং একই সাথে ভণ্ডের ভণ্ডামীর চিত্রকে তার চরিত্র নির্মাণে নয়, তার আশ্রয় নামায ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি সরাসরি বা আক্ষরিক অর্থে দাঁড় করিয়ে আমাকেও একইভাবে হত্যাযোগ্য বলে ঘোষণা করা হতে লাগলো। পরিস্থিতির তীব্রতা বুঝে আমি দ্রুত আমার লেখার নীচে একটা সংযুক্তি-ব্যাখ্যা জুড়ে দিই (কিন্তু স্ক্রীনশট আকারে যা ঘুরছে, সেখানে সেই ব্যাখ্যাটা রাখা হচ্ছে না)।
এ পর্যায়ে আমাকে যাঁরা জানেন-বোঝেন, এমন কিছু ইসলামী পণ্ডিত যখন বলেন যে, এটা কেউ বুঝতে পারবে না এবং এ ধরণের পরীক্ষা নেওয়া উচিত না, কারণ এতে অধিকাংশ মানুষ পাশ করবে না, এটার ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে—তখন তাঁদের সাথে একমত হয়ে আমি সাথে সাথে লেখাটা সরিয়ে নিই এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে ও ব্যাখ্যা দিয়ে একটা লেখা লিখি। সত্যিকার অর্থেই আমি তাঁদের কথা ও যুক্তি অন্তর থেকে বুঝেছি বলেই সাথে সাথে সেটা করেছি এবং কয়েকদিন পর আমি আবারও সৃষ্টিকর্তার কাছে এবং মুসলমান সমাজের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে লিখেছি।
কিন্তু তা সত্ত্বেও যারা সেখান থেকে ফিরলেন না তাদের কাছে আমার প্রশ্ন: এই বাংলাদেশকে তারা কোথায় নিয়ে দাঁড় করাতে চাইছেন?
* * *
আপনার কাছে প্রশ্ন: আপনার পূর্বপুরুষ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে এসেছেন, এদেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন, অস্পৃশ্যতার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁদেরকে এদেশের মানুষ এখনো হৃদয়ের মণিকোঠায় শতাব্দীর পর শতাব্দী বহন করে নিয়ে চলেছে। কিন্তু তাঁদের উত্তরাধিকার আপনি এবং আপনার মতো যারা আছেন, তারা আজ এদেশের মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে চান? এদেশের মানুষের তুলনায় আপনাদের পূর্বপুরুষের রুচি-সংস্কৃতি, শিক্ষা-দীক্ষা, আচার-ব্যবহার উত্তম ছিল বলেই পূর্ববঙ্গে ইসলাম ধর্মের বিকাশ এভাবে ঘটেছিল। আজ আপনাদের রুচি-সংস্কৃতি, শিক্ষা-দীক্ষা, আচার-ব্যবহার কোন বিবেচনায় উন্নত? এই মাটির মানুষের ভাষা-সংস্কৃতি-আচার-ব্যবহারের সাথে আপনার পূর্বপুরুষের যা কিছু সাংঘর্ষিক মনে হয়নি, তা কেন আজ আপনাদের কাছে সাংঘর্ষিক মনে হয়? ইরান-তুরান-আরব নয়, এই মাটির সন্তান হিসাবে আজ আমি এই প্রশ্ন রাখতে চাই। মনে রাখুন, আপনাদের এই আচরণ আগামীতে এই প্রশ্ন আরও সামনে নিয়ে আসবে।
মনে করার চেষ্টা করুন: “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” শ্লোগান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যঙ্গাত্মক পরিণতিতে পৌঁছেছিল কেন? কারণ পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের মনোভাব খুব দ্রুতই এদেশের মানুষ বুঝে ফেলেছিল।
ভাবার চেষ্টা করুন: মুক্তিযুদ্ধের পর কেন ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামী সংস্কৃতিকে ব্যঙ্গ করার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল? কারণ একাত্তরে কিছু মানুষ ও কিছু দল কর্তৃক ইসলামের নাম ভাঙিয়ে পাকিস্তানীদের হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
বোঝার চেষ্টা করুন: চব্বিশের অভ্যুত্থানে “তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার” শ্লোগান কেন হলো? কারণ মুক্তিযুদ্ধকে আশ্রয় করে দীর্ঘদিন ধরে যাবতীয় গুম-খুন-নৈরাজ্যের বৈধতা দেওয়া চলছিল।
এই যে নিকট ইতিহাসের মধ্যে আমরা এগুলো দেখতে পাই, তা থেকে আমাদের শিক্ষাটা কি? শিক্ষাটা হলো প্রথমত সীমালঙ্ঘন না করা, আলোচনার পরিবেশ রাখা, সংলাপের সুযোগ রাখা। দ্বিতীয় হলো, কথা, কথার কথা, কথাপ্রসঙ্গে কথা এবং যে কোনো কথার প্রেক্ষাপট, লক্ষ্য, উপলক্ষ্য ইত্যাদি বোঝা, এবং সেই কথার আক্ষরিক অর্থ ও মর্মার্থ উপলব্ধি করা। কিন্তু দীর্ঘ ফ্যাসিবাদে আক্রান্ত থাকতে-থাকতে আর প্রতারিত হতে-হতে মানুষ যেহেতু সেই জায়গাটা হারিয়ে ফেলেছে, রাষ্ট্রও নেই হয়ে গেছে, সুতরাং যারা পরিস্থিতিটা উপলব্ধি করতে পারেন তাদেরই এগিয়ে এসে, কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও আজ কথা বলা প্রয়োজন; তাদের প্রয়োজন নয় মানুষের সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মাছ শিকার করা। আল্লাতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাকে কোনো মাছ শিকারের বিদ্যা দেননি। এদেশে আমি কোনো মাছ শিকার করিনি।
* * *
আহমদ ছফার একটা কথা মনে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের নৈরাজ্য দেখে তিনি বলেছিলেন যে, শেখ মুজিব কিছু বাঘের বাচ্চা পয়দা করেছেন, আজ লোকে সেগুলো নিয়ে খেলা দেখায়। আজকের যে অবস্থা তাতে সেভাবেই বলতে হবে, শেখ হাসিনা এদেশে এমন অশিক্ষা-কুশিক্ষার চাষবাস করে গেছে যে, আজ দেশে-বিদেশে বসে বহু মানুষ তাদের নিয়ে বাদরের নাচ দেখায়। জেনে-বুঝে আপনার মতো অনেকেই সেই বাজিগরের খেলায় মত্ত আছেন। মজলুমের পক্ষে দাঁড়িয়ে জালিমের মুখের উপর কথা বলতে ইসলাম আমাদের শেখায়, ধর্ম আমাদের শেখায়। বিগত জুলুমের কালে আপনার কলিজা কোথায় বন্দী হয়ে ছিল?
মনে রাখি, ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রে থেকে পরিচালনা করা যায়, রাষ্ট্রের বাইরে থেকেও পরিচালনা করা যায়। রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ ঘানি টানলে সামাজিক ফ্যাসিবাদ নানা কিছুকে আশ্রয় করে উৎপাদিত হতে পারে। আর ফ্যাসিবাদ মানেই বিশাল জনসমর্থন সবসময় তা কিন্তু না, কারণ হাসিনার ফ্যাসিবাদ আমাদের চোখের সামনে দেখা। দীর্ঘ সেই ফ্যাসিবাদকালে যা কিছু বলেছি-করেছি, সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে করেছি, মানুষের কল্যাণ-ভাবনায় করেছি। আমার সকল কাজে আমি তাকেই স্মরণে রাখি। আপনাদের নতুন ফ্যাসিবাদের ঊষালগ্নেও আমার নতুন কোনো পথ নেই। কিন্তু আমি জানি, যে কোনো ফ্যাসিবাদেই দেশের যে-কারো জীবন তুচ্ছ। আর এর সাথে যদি থাকে পুরনো ফ্যাসিবাদের অশিক্ষা-কুশিক্ষা- প্রতারণা-নির্যাতনে বিপর্যস্ত অগুনতি মানুষ আর দেশী-বিদেশী বহু পক্ষ, সেখানে এক রাখাল রাহা কিছু না। খোদা হাফেজ।
.
রাখাল রাহা, ১লা রমজান ১৪৪৬

দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ

দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT