নরসিংদীতে সড়ক ও মহাসড়কে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজবিরোধী অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে দু’জনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে জেলার সব সড়ক ও মহাসড়ককে চাঁদাবাজমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন এএসপি শামীম নিজেই। অভিযানের সময় তিনি স্বাধীনতা চত্বরে সরেজমিনে যান এবং দেখতে পান—দু’জন ব্যক্তি প্রকাশ্যে চালকদের গাড়ি থামিয়ে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ওই দুই চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতরা হলো—ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায় মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. ফোরকান উদ্দিন (৪৬) এবং নরসিংদীর রায়পুরার মৃত আবু সিদ্দিকের ছেলে রবি মিয়া (২৬)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় আদায়কৃত নগদ ২ হাজার ৮৪০ টাকা।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরেই একটি চক্র নরসিংদী শহরের বিভিন্ন সড়কে ‘টোলের নামে’ অবৈধভাবে যানবাহন থেকে চাঁদা তুলে আসছিল। যদিও নির্দিষ্ট টার্মিনাল ব্যতীত অন্য কোথাও টোল আদায়ের নিয়ম নেই, তবু ইজারাদারদের নাম ভাঙিয়ে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি থামিয়ে অর্থ আদায় করে আসছিল। সর্বশেষ সকালে চাঁদা না দেওয়ায় এক প্রতিবন্ধী অটোরিকশাচালক মমিনুল ইসলামকে মারধর করার ঘটনায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায় এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্বৃত্তদের আটক করে।
সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেইজে দেখুন ভিডিও
অভিযান শেষে এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম সাংবাদিকদের বলেন, “নরসিংদীর পুলিশ সুপার ও আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশে আমরা সড়ককে চাঁদাবাজমুক্ত করতে অভিযান শুরু করেছি। জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আজকের অভিযান পরিচালিত হয় এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, “চাঁদাবাজ চক্র যতই শক্তিশালী হোক, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। জনস্বার্থে আমরা যেকোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।”
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে—চাঁদাবাজির বিষয়ে কারও কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য, ছবি, ভিডিও বা অডিও থাকলে তা নির্ভয়ে পুলিশকে জানান। কারণ এই যুদ্ধ শুধু পুলিশের নয়, এটি জনগণের অধিকার রক্ষার লড়াই।
সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্টেও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেন জানিয়ে ছিলেন, “নরসিংদীতে কোনোভাবেই চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। আমরা সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
নরসিংদীতে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের এই উদ্যোগ এবং তাৎক্ষণিক অভিযানে জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। শহরের রাস্তায় এখন চোখে পড়ছে পুলিশের সক্রিয় তৎপরতা এবং জনগণের মুখে প্রশংসার গুঞ্জন।