ধরা পড়লেন জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। ২৯৭ কোটি টাকার আলোচিত ঋণ জালিয়াতির মামলায় বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ২ নম্বর রোডের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ধানমন্ডিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসির উদ্দিন ইসলাম।
গ্রেপ্তারের পরই তাকে মিরপুরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আগামীকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে হস্তান্তর করা হবে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৩ জুন দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন বাদী হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদসহ মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে উঠে আসে, স্থাপনাবিহীন মাত্র ৩ কোটি ৪ লাখ টাকায় কেনা জমিকে ১৬৪ কোটি টাকা মূল্যায়ন দেখিয়ে ঋণ অনুমোদন, বিতরণ ও আত্মসাতের ঘটনা।
অভিযোগ অনুযায়ী, অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বাদল সুপ্রভ স্পিনিংয়ের অনুকূলে মঞ্জুর হওয়া ১৮০ কোটি টাকার ঋণের মধ্য থেকে ৫০ কোটি টাকা গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন। আর এ পুরো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে সহায়তা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত, পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথসহ আরও অনেকে।
দুদকের দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রমাণিত হয় যে, এই বিশাল অর্থ কেলেঙ্কারির পেছনে জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। এরপরই তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ডিবি পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ অভিযানে ধানমন্ডির একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে তাকে আটক করা হয়।
ব্যাংকিং খাতের অন্যতম আলোচিত এই মামলার মূল আসামি গ্রেপ্তারের খবরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমন দুর্নীতির ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশকে ফোকলা করার কোনো সুযোগ আর কাউকে দেওয়া হবে না। সবাইকেই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।”
জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি এখন তদন্তের শেষ ধাপে। তাকে রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এই অর্থ কেলেঙ্কারির সম্পূর্ণ নেপথ্যের কাহিনী বের করে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতকে রক্ষা এবং দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলে দেওয়ার প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।