দাসপ্রথা ও ঔপনিবেশিক অর্থে চলা এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় - তদন্তে প্রকাশ বর্ণবাদী তত্ত্ব তৈরির প্রমাণ। - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
নেতৃত্ব, সংগঠন ও জনসেবা একসাথে তুলে ধরেছে জাবি ছাত্রদলের টিকাদান কর্মসূচি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই ৩৬ কর্ণার’ উদ্বোধন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে যোগ দিলেন যুবলীগের তিন নেতা ঐকমত্য সংলাপে আবার বিএনপির ‘ওয়াকআউট’ টঙ্গীতে খোলা ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ নারী, উদ্ধার অভিযানে রাতভর চেষ্টা পিরোজপুরের পেয়ারা রাজ্যে পরিবেশ রক্ষায় ৬ দফা নির্দেশনা, নেছারাবাদ প্রশাসনের নতুন উদ্যোগ দাসপ্রথা ও ঔপনিবেশিক অর্থে চলা এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় – তদন্তে প্রকাশ বর্ণবাদী তত্ত্ব তৈরির প্রমাণ। নরসিংদীর সড়ক ও মহাসড়ক চাঁদাবাজমুক্ত ঘোষণা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের, অভিযানে গ্রেপ্তার দুইজন খামেনিকে হত্যার হুমকি দিল ইসরায়েল, তেহরানে হামলার ইঙ্গিত বাংলাদেশে ৮টি আইকনিক মসজিদ নির্মাণ হবে ২৪৪ কোটি টাকার সৌদি অনুদানে

দাসপ্রথা ও ঔপনিবেশিক অর্থে চলা এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় – তদন্তে প্রকাশ বর্ণবাদী তত্ত্ব তৈরির প্রমাণ।

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫
  • ১০ বার দেখা হয়েছে

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দাসপ্রথা ও বর্ণবাদী অর্থে পরিচালনার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ, তদন্তে উঠে এলো উপনিবেশবাদ ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব তত্ত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

ব্রিটেনের অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতে দাসপ্রথা, ঔপনিবেশিক শোষণ এবং বর্ণবাদী ‘ভুয়াবিজ্ঞান’ তৈরির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এসব শোষণমূলক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত দাতাদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি শত শত বছর ধরে বিশাল অঙ্কের অর্থও গ্রহণ করেছে, যা দিয়ে এখনো পরিচালিত হচ্ছে নানা একাডেমিক কর্মসূচি। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক ঐতিহাসিক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই বিস্ফোরক সব তথ্য, যা নাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের শিক্ষা জগৎকে।

তদন্তে জানা গেছে, আফ্রিকান দাসপ্রথা ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সুবিধাভোগী দাতাদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি যে অনুদান পেয়েছে, তার বর্তমান মূল্য অন্তত ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। মজুরি বৃদ্ধির হারে হিসাব করলে এই পরিমাণ দাঁড়ায় ২০২ মিলিয়ন পাউন্ডে, আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারে হিসাব করলে তা পৌঁছে যায় ৮৪৫ মিলিয়ন পাউন্ডে। এ অর্থেই নির্মিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওল্ড কলেজ ও পুরাতন মেডিকেল স্কুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভবন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় এখনও এমন দাতাদের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করছে, যাদের ইতিহাস দাসপ্রথা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও ছদ্মবিজ্ঞানের সঙ্গে জড়িত। আজও সেই অর্থেই চালানো হচ্ছে বিভিন্ন লেকচার, সেমিনার, ফেলোশিপ ও পুরস্কার কার্যক্রম। বর্তমানে এমন ১০টি তহবিল সক্রিয় রয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত মূল্য প্রায় ৯.৪ মিলিয়ন পাউন্ড।

ঔপনিবেশিক শোষণের অর্থে পরিচালিত হয় এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়: তদন্ত প্রতিবেদন

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহে থাকা প্রায় ৩০০টি খুলি মস্তিষ্কবিদরা (ফ্রেনোলজিস্ট) দাস ও ঔপনিবেশিত দেশগুলোর জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন বলে জানা যায়।

১৮ ও ১৯ শতকে এডিনবার্গ ছিল শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী ‘জাতিগত বিজ্ঞান’ চর্চাকারী অধ্যাপকদের কেন্দ্রস্থল। এসব শিক্ষকেরা ভুয়া তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে আফ্রিকানদের জাতিগতভাবে নিচু হিসেবে চিহ্নিত করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় থাকা অন্তত ৩০০টি মানবমস্তিষ্কের খুলি তখন দাসপ্রথা ও উপনিবেশিত জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

তদন্তের প্রধান উদ্যোক্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল স্যার পিটার ম্যাথিসন এসব তথ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই কঠিন ও অস্বস্তিকর ইতিহাস মেনে নেওয়াই এই পর্যালোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। শোষণের শিকারদের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, অন্তত ১৫টি তহবিল গড়ে উঠেছে দাসপ্রথা-সম্পৃক্ত উৎস থেকে এবং ১২টি তহবিল এসেছে ভারত, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সঙ্গে যুক্ত দাতাদের কাছ থেকে। তাছাড়া, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা এক শতাংশেরও কম এবং শিক্ষার্থীর হার মাত্র দুই শতাংশ—যা যুক্তরাজ্যের কৃষ্ণাঙ্গ জনসংখ্যার আনুপাতিক হারের তুলনায় অনেক নিচে।

প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৪৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দাসপ্রথা ও ঔপনিবেশিক উৎস থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু পটভূমির শিক্ষাবিদ নিয়োগ এবং বর্ণবাদবিষয়ক গবেষণায় ব্যয় করার আহ্বান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ইন্টারন্যাশনাল হলোকাস্ট রিমেম্বারেন্স অ্যালায়েন্স (IHRA) নির্ধারিত ইহুদিবিদ্বেষ সংজ্ঞা প্রত্যাহারের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই সংজ্ঞা ইসরায়েলের গাজা ও পশ্চিম তীরে পরিচালিত নীতিমালার ওপর মুক্ত বিতর্কে বাধা সৃষ্টি করছে।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ থেকে ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়ে ম্যাথিসন জানান, এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সক্রিয়ভাবে পর্যালোচনা করছে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও আলোচনা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয় নতুনভাবে একটি ‘বর্ণ ও বর্ণবাদ পর্যালোচনা বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করছে, যারা গবেষণা, শিক্ষার জন্য কেন্দ্র স্থাপন এবং দাতাদের শনাক্ত করতে কাজ করবে। পাশাপাশি সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু করাও এই পরিকল্পনার অংশ।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতকে সামনে এনে এমন সাহসী প্রতিবেদন প্রকাশ ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে—বিশেষ করে যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডাম স্মিথ ও ডেভিড হিউমের মতো দার্শনিকদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT