পাবনা সদর হাসপাতালে ডিউটিতে থাকা এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনা চিকিৎসা মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। আহত চিকিৎসক বর্তমানে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার গভীর রাতে। বাশের হোসেন নামে এক রোগী ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হঠাৎ করেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নিচতলায় ডিউটিতে থাকা নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক দ্রুত দোতলায় গিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন।
চিকিৎসা কার্যক্রম চলাকালীন সময় রোগীর এক আত্মীয় ভিডিও ধারণ শুরু করেন। এমন জরুরি মুহূর্তে ভিডিও ধারণে মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটলে চিকিৎসক ভিডিও বন্ধ করতে অনুরোধ জানান। এসময় ভুলবশত তার ফোনটি হাত থেকে পড়ে গেলে উত্তেজিত হয়ে ঐ আত্মীয় চিকিৎসককে ধাক্কা দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করেন।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয় যে, নারী চিকিৎসক পাশের ওয়ার্ডে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। কিন্তু সেখান থেকেও টেনে হিঁচড়ে বের করে আবারও আক্রমণ চালানো হয়। এ সময় রোগী জীবিত থাকলেও কিছুক্ষণ পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, হামলার কারণে পরিস্থিতি এমন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, যথাযথ চিকিৎসা প্রদান ও মৃতদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়াতেও বিঘ্ন ঘটে। এতে রোগীর স্বজনরা আরও উত্তেজিত হয়ে হট্টগোল শুরু করে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসক মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ বলছেন, “রানা প্লাজা থেকে শুরু করে করোনার মহামারি, প্রতিটি সংকটেই চিকিৎসকরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অথচ বিনিময়ে প্রাপ্তি শুধু লাঞ্ছনা, নির্যাতন ও নিরাপত্তাহীনতা।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র চিকিৎসক জানান, “মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির সময় কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি, কিন্তু চিকিৎসকরা নিজের দায়িত্বের বাইরেও মানবিকতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর আজ সেই চিকিৎসকদেরই প্রহৃত হতে হচ্ছে।”
এদিকে, সুনামগঞ্জে আরেক চিকিৎসক ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। একের পর এক হামলার ঘটনায় চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
চিকিৎসক সমাজ দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, “চিকিৎসকরা যদি নিরাপদ না থাকেন, তাহলে রোগীদের চিকিৎসা সেবা কীভাবে নিশ্চিত হবে?”
চিকিৎসকদের অভিযোগ, হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা কর্মী বা আনসার মোতায়েন না থাকা, প্রশাসনের অবহেলা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে বারবার।
এই বিষয়ে পাবনা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চিকিৎসক সমাজ বলছে, এই ঘটনায় অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তার না করা হলে সারাদেশে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হতে পারে।