
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বুধবার বিকাল ৩টা ৩ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এই জানাজাকে স্মরণকালের বৃহত্তম—এবং কোনো মুসলিম নারীর সর্ববৃহৎ জানাজা—বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা মুসলিম বিশ্বেই এই জানাজা নজিরবিহীন বলে মনে করছেন আয়োজক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষের ঢল নামে। কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
জানাজায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, তিন বাহিনীর প্রধান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং বিদেশি কূটনৈতিকরা। জানাজায় ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব।
জানাজার আগে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার পর লাল-সবুজের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো মরদেহবাহী গাড়ি জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ করে। জানাজাস্থলে খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালীন দেওয়া বক্তব্য প্রচার করা হয়।
এর আগে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ গুলশানের তারেক রহমানের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য, স্বজন ও দলীয় নেতারা শেষ শ্রদ্ধা জানান। এ সময় কোরআন তিলাওয়াত করেন তাঁর বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বেলা ১১টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে মরদেহবাহী গাড়িবহর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। গাড়িবহরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, পরিবারের সদস্য এবং দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজায় অংশ নেওয়া আলমগীর, আদিব ও সুলাইমানসহ অনেকে বলেন, দেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় জানাজা। তাঁদের ভাষ্য, “এটি শুধু জনসমুদ্র নয়, মহা জনসমুদ্র। একজন রাজনৈতিক নেত্রী কতটা ভালোবাসা পেলে এমন দৃশ্য সৃষ্টি হয়, খালেদা জিয়া তা দেখিয়ে গেলেন।”
তাঁরা আরও বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও অবদান ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন আপসহীন দেশনেত্রী ও জাতীয় নেত্রী।
বুধবার বাদ জোহর জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। মঙ্গলবার রাত থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ট্রেন, লঞ্চ, বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে ঢাকায় আসেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে সরকার ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং বুধবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
আপসহীন দেশনেত্রী ও জাতীয় নেত্রীর ইন্তেকালে শোকে স্তব্ধ পুরো বাংলাদেশ।