 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    
ঢাকা, ৩১ অক্টোবর: কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলের সেন্টমার্টিন দ্বীপে আগামীকাল শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে আবারও পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। প্রায় নয় মাস পর পর্যটনের জন্য দ্বীপটি খুলে দেওয়া হচ্ছে, তবে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনে গিয়ে দিনে ফেরার শর্তে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারবেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপে দায়িত্বশীল পর্যটন নিশ্চিত ও পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে এবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে কোনো পর্যটক দ্বীপে রাত কাটাতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সীমিতভাবে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকের রাত্রিযাপন অনুমতি দেওয়া হবে, তবে ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিনগামী কোনো নৌযান পরিচালনার অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে, যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, মোটরসাইকেল বা সিবাইক চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেয়া বনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, রাজকাঁকড়া, প্রবাল, শামুক–ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া দ্বীপে পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
১. বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না।
২. পর্যটকদের ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে।
৩. টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে; কোড ছাড়া টিকিট অবৈধ।
৪. নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম; রাতে থাকা নিষিদ্ধ।
৫. ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সীমিত রাত্রিযাপন অনুমতি; ফেব্রুয়ারিতে ভ্রমণ বন্ধ।
৬. প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন।
৭. সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ।
৮. কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ।
৯. সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, রাজকাঁকড়া, প্রবাল ও শামুক–ঝিনুক ধরা বা ক্ষতি করা যাবে না।
১০. মোটরসাইকেল, সিবাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচল নিষিদ্ধ।
১১. পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বহন করা যাবে না।
১২. পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখতে হবে এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
এদিকে, প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ ও ‘বার-আউলিয়া’ নামে দুটি জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাত্রা শুরু করার কথা ছিল। তবে সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, শনিবার থেকে কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়বে না। তার ভাষায়, “ট্যুরিজম বোর্ডের সফটওয়্যার এখনো চালু হয়নি, দিনে গিয়ে দিনে ফেরার সিদ্ধান্তে পর্যটকও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাহাজ চলবে না। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে চালুর প্রস্তুতি চলছে।”
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেন্টমার্টিনগামী ঘাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের তত্ত্বাবধান থাকবে। কিউআর কোড স্ক্যান করে টিকিট যাচাই করা হবে এবং সরকারের জারি করা ১২ দফা নির্দেশনা পর্যটকেরা মেনে চলছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবে প্রশাসন।
সরকার আশা করছে, নতুন নির্দেশনা অনুসরণ করলে সেন্টমার্টিনের নাজুক পরিবেশ ও প্রবালপ্রাচীরের অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠবে।
