সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) মোঃ আসাদুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন অনলাইন এক্টিভিস্ট জুলকারনাইন সায়ের। তিনি দাবি করেছেন, কুখ্যাত মেজর জেনারেল (অবঃ) জিয়াউল আহসানের শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের রক্ষক ও বিনিয়োগ অংশীদার ছিলেন এই কর্নেল আজাদ। এছাড়াও, তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কর্নেল আজাদ এর ফেসবুক প্রোফাইল এবং পোস্টেও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হবার পোস্ট ও ছবি দেখা যাচ্ছে।
জুলকারনাইন তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, কর্নেল আজাদ ও জিয়াউল আহসানের স্ত্রীর নামে স্বাক্ষরিত কোটি কোটি টাকার চেক ও কমপক্ষে দুই-তিন কেজি ওজনের দলিলপত্র তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই সমস্ত প্রামাণ্য কাগজ ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ তদন্ত সেল গঠন করে অনুসন্ধান করা জরুরি।
পোস্টে আরও বলা হয়, কর্নেল আজাদ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং দীর্ঘদিন যাবৎ জিয়াউল আহসানের কালো টাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থাবর সম্পদে বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি দুইটি ভিন্ন প্রোফাইলের মাধ্যমে নিজেকে বিএনপির সক্রিয় নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।এ সংশ্লিষ্ট ছবিও তিনি পোস্টে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তজুল ইসলাম এর আগে জানান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে একটি তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে, যার পরিমাণ ৪০ কোটির বেশি।
তবে কর্নেল আজাদ এই অভিযোগ সম্পর্কে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। বিএনপির পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য আসেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যেখানে রাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থা একজন অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সক্রিয় তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ভূমিকাও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। বিশেষ করে যদি অভিযোগকারীর হাতে উল্লেখিত দলিল সত্য হয়, তবে সেটি মামলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
সুশাসনের দাবিতে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন বলছে, এ ধরনের অভিযোগ শুধুই সামাজিক মাধ্যমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত আইনগত প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা উচিত, যাতে দায়ী ব্যক্তিরা বিচারের বাইরে না থাকে।
সরকারি মহলের পক্ষ থেকে এখনও কর্নেল আজাদের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্তের ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ এবং উদ্বেগ দুটোই বাড়ছে। সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।