পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার বিখ্যাত পেয়ারা বাগান শুধু দেশের নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা মানুষের কাছে এক স্বপ্নের পর্যটন গন্তব্য। বর্ষা মৌসুমে এই নদীঘেরা ভাসমান বাজার যেন রূপকথার রাজ্য। তবে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করতেই এবার বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিলো উপজেলা প্রশাসন। বাগানের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ৬ দফা নির্দেশনা জারি করেছে প্রশাসন।
রোববার (২৭ জুলাই) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে নেছারাবাদ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম এই নির্দেশনা জারি করেন। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে জানানো হয়—এলাকাটি পরিবেশ-সংবেদনশীল হওয়ায় স্থানীয় জনগণের স্বাভাবিক জীবনধারা এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে সকলকে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
প্রথমত, পর্যটন এলাকায় কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র, লাউডস্পিকার বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, উচ্চ শব্দ কেবল পরিবেশ দূষণই সৃষ্টি করে না, তা স্থানীয় বাসিন্দা এবং বন্যপ্রাণীদের জন্যও ক্ষতিকর। দ্বিতীয়ত, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সী পর্যটকের ভ্রমণ নিরাপদ রাখতে সকলকে শালীনতা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। অশ্লীল আচরণ, পোশাক বা কথাবার্তা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় বলে জানানো হয়েছে।তৃতীয়ত, বড় ট্রলার বা উচ্চ শব্দসম্পন্ন ইঞ্জিনচালিত নৌকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব যানবাহনের ভিড় ও শব্দ প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়।
চতুর্থ নির্দেশনায় ছোট কিংবা মাঝারি আকারের নৌকা ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে এবং পর্যটকেরাও নিরাপদে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।
পঞ্চম নির্দেশনায় বলা হয়, পর্যটকদের সঙ্গে নিয়ে আসা খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিন, প্লাস্টিক বা যেকোনো ধরনের বর্জ্য পানিতে বা পরিবেশে ফেলা যাবে না। তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শেষ নির্দেশনাটি আরও জোরালো—উপরোক্ত নির্দেশনা কেউ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাজার হাজার পর্যটক এই এলাকায় ভিড় করেন। ভাসমান পেয়ারা বাজার এবং এর আশপাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবল প্রশাসনের নয়, পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। সবাই সচেতন হলে এই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দীর্ঘদিন ধরে অটুট রাখা সম্ভব হবে।