কানাডার স্বাস্থ্যসেবার বাস্তব চিত্র: এক অভিবাসীর অভিজ্ঞতা - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবিতে আজ থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি, বার্ষিক পরীক্ষাও স্থগিত কুবিতে ইউট্যাবের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত স্কটল্যান্ডের অনারারি কনসাল জেনারেল হলেন ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই সড়ক সংস্কারের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ ভোলা বরিশাল সেতুর দাবিতে ইবিতে মানববন্ধন মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা আদর্শিক নেতৃত্বই জাতিকে এগিয়ে নেয়—আফগানিস্তানের উন্নয়ন তার প্রমাণ: মামুনুল হক নোয়াখালীতে তাহাজ্জুদের সময় ১২ বছরের মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু শেষ হলো কুবির পঞ্চম ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন ভারত অনুমতি না দেওয়ায় বুড়িমারীতে ভুটানের ট্রানজিট পণ্য আটকে

কানাডার স্বাস্থ্যসেবার বাস্তব চিত্র: এক অভিবাসীর অভিজ্ঞতা

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
  • ১০৫ বার দেখা হয়েছে
রেদওয়ান কবিরের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পাওয়া ছবি
রেদওয়ান কবিরের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পাওয়া ছবি

কানাডার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনেকেরই বড় ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে। “বিনামূল্যে চিকিৎসা” শুনে সবাই ধরে নেন যে এটি মানসম্পন্ন ও দ্রুত সেবা প্রদান করে। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই তাই? রেদওয়ান কবির নামক এক বাংলাদেশী অভিবাসীর জবানিতে আলোকে আমরা জানবো, এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর ও ধীরগতি সম্পন্ন হতে পারে।

অপারেশনের দীর্ঘ অপেক্ষা: একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা

দুই দিন আগে, আমার স্ত্রীর হাঁটুর অস্ত্রোপচার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, তিনি সিঁড়ি থেকে পড়ে যান এবং সামান্য গোড়ালির ব্যথা পান। তখন আমাদের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা ছিল না, তাই একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ফি দিয়ে পরামর্শ নিই। ডাক্তার জানান এটি গুরুতর কিছু নয়—শুধু বিশ্রামের পরামর্শ দেন এবং কোনো সাপোর্ট ব্যবহারের প্রয়োজন নেই বলে জানান।

কিন্তু এক মাস পর, হাঁটুতে ব্যথা শুরু হলে আমরা এক্স-রে ও এমআরআই করাই। এক্স-রেতে কিছু ধরা পড়েনি, কিন্তু এমআরআই-তে একটি ছোট টিউমার শনাক্ত হয়। আমাদের পারিবারিক ডাক্তার নিশ্চিত করতে চাননি এটি সত্যিই টিউমার কি না। উল্লেখ্য, এক্স-রে করাতে আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়েছিল এবং এমআরআই-এর জন্য এক মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে, আমরা এই প্রক্রিয়া শেষ করি অক্টোবর মাসে।

এরপর পারিবারিক ডাক্তার একজন বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করেন। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—কানাডায় সরাসরি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া যায় না, পারিবারিক ডাক্তারের রেফার লাগবেই। প্রথমে আমাদের চার মাস অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু নভেম্বর মাসে আমার স্ত্রীর ব্যথা তীব্র হয়ে গেলে আমরা জরুরি রেফারের জন্য অনুরোধ জানাই। অবশেষে, ২৩ ডিসেম্বর প্রথম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করতে পারি, যিনি অবাক হয়ে যান এবং জানান যে সার্জারি দরকার। কিন্তু, আমাদের আবারও অন্য এক সার্জনের কাছে পাঠানো হয়।

আমাদের বলা হয়েছিল ১৫ জানুয়ারির মধ্যে পরবর্তী অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবো, কিন্তু যখন আমরা ফলো-আপ করলাম, জানতে পারলাম রেফার পাঠানোই হয়নি! এর ফলে আবার এক মাস অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে, সার্জনের সঙ্গে দেখা হলে আমরা ব্যাখ্যা করি যে আমার স্ত্রী আট মাস ধরে কষ্ট পাচ্ছেন—তিনি হাঁটতে পারছেন না, কাজ করতে যেতে পারছেন না এবং হাঁটু বাঁকানোও সম্ভব নয়। প্রথমে ডাক্তার আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে বলেন, তবে সৌভাগ্যবশত, আমার স্ত্রীর তীব্র ব্যথা দেখে তিনি দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেন।

অস্ত্রোপচারের পর অসহায় অবস্থা

অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। ডাক্তার আমাদের পোস্ট-অপারেটিভ নির্দেশনা দেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে ব্যান্ডেজ আমরা নিজেরাই খুলবো এবং সেলাই ঢাকার জন্য ওয়াটারপ্রুফ ব্যান্ডেজ বা গজ ব্যবহার করবো।

সপ্তাহান্তে, ব্যান্ডেজ খুলতে গিয়ে দেখি শেষের গজটি ক্ষতের সঙ্গে আটকে গেছে, এবং এটি সরাতে ব্যথা অনুভূত হয়। হাসপাতাল ফোন করলে তারা জানায়, শল্যচিকিৎসা বিভাগ বন্ধ এবং জরুরি নার্সের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এক ঘণ্টা পরে নার্স ফোন করে সাধারণ কিছু প্রশ্ন করেন এবং পরামর্শ দেন স্থানীয় ফার্মেসি থেকে স্যালাইন কিনে নিজেরাই ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করতে।

কিন্তু আমি ঝুঁকি নিতে চাইনি। আমার স্ত্রীকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে আমি ৯১১ নম্বরে কল করে একজন প্যারামেডিক পাঠানোর অনুরোধ জানাই।

এই দীর্ঘ প্রতীক্ষা কি বাংলাদেশে সম্ভব?

এই অভিজ্ঞতা যদি বাংলাদেশে হতো, তাহলে কী ঘটতো? একজন রোগী কি এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতেন? অস্ত্রোপচারের পর নিজেরাই ব্যান্ডেজ খুলতে হতো?

অনেকে বলবেন, “এটি তোমার অভিজ্ঞতা, সবার ক্ষেত্রে এমন হয় না।” কিন্তু আমি এখানে ৮ বছর ধরে আছি। ২০১৭ সালে আমার নিজের একটি দুর্ঘটনা হয়েছিল এবং কানাডার চিকিৎসার গাফিলতির কারণে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা হয়েছে। পরে বাংলাদেশে ফিরে সঠিক চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। জরুরি সেবা এখানে অত্যন্ত ধীরগতির। মাত্র এক সপ্তাহ আগে, আমার এক বন্ধু টরন্টোর সানি ব্রুক হাসপাতালে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষার পর মারা যান।

কানাডার স্বাস্থ্যসেবা: বাস্তবতা ও প্রচারের ফারাক

অনেকেই বলেন, “কানাডার স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে, তাই ভালো।” কিন্তু বাস্তবতা হলো: “বিনামূল্যের” স্বাস্থ্যসেবা মানেই ভালো স্বাস্থ্যসেবা নয়। কানাডার স্বাস্থ্যব্যবস্থা গত ১০ বছর ধরে ভেঙে পড়েছে। গুগলে খুঁজে দেখুন, কতজন রোগী জরুরি সেবার জন্য অপেক্ষার সময় মারা গেছেন।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে ভাবুন

আমি এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি কারণ অনেকে আমাকে ভুল বুঝেছেন, কারণ আমি কানাডায় আসতে নিরুৎসাহিত করেছি। মানুষ ভাবে, “যদি জীবন এতই খারাপ হয়, তাহলে সে এখনো এখানে কেন?”

বাস্তবতা হলো, কানাডার জীবন বাইরে থেকে যতটা সুন্দর দেখায়, বাস্তবে ততটা সহজ নয়। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব দূরে থাকার কারণে কঠিন পরিস্থিতিতে একা সংগ্রাম করতে হয়।

আপনি যদি শুধুমাত্র “ফ্রি হেলথকেয়ার” শুনে কানাডায় আসতে চান, তবে একবার ভেবে দেখুন: আপনি কি এই দীর্ঘ অপেক্ষার জন্য প্রস্তুত? আপনি কি চাইবেন আপনার প্রিয়জন অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতালের পরিবর্তে আপনার ওপর নির্ভর করুক?

যারা কানাডা আসতে চান, তারা যেন সত্যিটা জানেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT