সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে আলোচনায় আসা ঢাকার আগারগাঁওয়ের ফুটপাথের জনপ্রিয় খাবারের দোকান ‘ফুটপাতের বুফে’ এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে। বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে, ইউটিউবারদের ভিড়ে রান্নার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে, আর স্থানীয় প্রশাসনের উচ্ছেদ চেষ্টায় মানবিক এই উদ্যোগ হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রায় এক বছর আগে মাত্র তিন কেজি চাল দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন মিজানুর রহমান। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ৩৬ থেকে ৪১ কেজি চাল ব্যবহার করে প্রায় ৪০০ মানুষকে খাবার সরবরাহ করেন। কর্মী না থাকায় নিজেই রান্না, পরিবেশন ও দোকান সামলান তিনি। গ্রাহকরা নিজেদের মতো খাবার নিয়ে খেয়ে প্লাস্টিকের ডিব্বায় টাকা রেখে যান—কেউ পুরো টাকা দেন, কেউ দেন না, তবুও চলছিল দোকান।
তবে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি বদলে যায়। আগে যেখানে দিনে ১২০০ টাকার বেশি বিক্রি হতো, এখন তা নেমে এসেছে ৫০০–৬০০ টাকায়। মিজানের অভিযোগ, একদল ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর সারাদিন ভিডিও করতে এসে রান্নার সময় নষ্ট করছেন, ফলে খাবার ঠিকমতো প্রস্তুত করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে দোকান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। মিজানের দাবি, এটি একজন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তার নির্দেশে হয়েছে, যিনি বলেছেন—এই স্থানে কোনো ‘হোটেল’ থাকতে পারবে না। মিজান মনে করেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তার এই রাস্তার পাশের দোকানটি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান, যা হয়তো কিছু সরকারি কর্মকর্তার চোখে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যে জায়গাটা আগে প্রকাশ্যে প্রস্রাব-মলত্যাগের জন্য ব্যবহৃত হতো, তখন কেউ কিছু বলেনি। এখন কেন আমার দোকান লক্ষ্যবস্তু? ফুটপাত উচ্ছেদের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের, তাহলে পুলিশ কেন পাঠানো হলো?”
মাগরিবের আগেই দোকান গুটিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় মিজানকে। ব্যবসা মন্দায় থাকায় স্ত্রীও অসন্তুষ্ট। তবে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে জানান, “দোকান ভেঙে দিলেও আমি অন্তত ৩০০ মানুষকে রাস্তা থেকে খাবার দিয়ে যাব।” একইসাথে তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন—“দয়া করে আমার হোটেলটি নষ্ট করবেন না।”