মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রায় ২,৪০,০০০ ইউক্রেনীয় নাগরিকের অস্থায়ী আইনগত মর্যাদা বাতিল করার পরিকল্পনা করছে, যারা রাশিয়ার সাথে সংঘর্ষের কারণে পালিয়ে এসেছিলেন। একজন শীর্ষ ট্রাম্প কর্মকর্তা ও তিনটি সূত্র এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে, তাদের দ্রুত নির্বাসনের সম্মুখীন হতে হতে পারে।
এই পদক্ষেপটি এপ্রিলের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে এবং এটি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অধীনে ইউক্রেনীয়দের স্বাগত জানানোর নীতির বিপরীত একটি সিদ্ধান্ত হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনীয়দের জন্য থাকা সুরক্ষা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল এর আগেই, কিন্তু এটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের পর নতুন মাত্রা পায়। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মানবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া ১৮ লাখেরও বেশি অভিবাসীর আইনগত মর্যাদা বাতিল করার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এটি করা হচ্ছে।
মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তরের (DHS) মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন বলেছেন, বর্তমানে এ বিষয়ে কোনও ঘোষণা নেই। হোয়াইট হাউস ও ইউক্রেনীয় দূতাবাস মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশ DHS-কে “সমস্ত ক্যাটাগরিক্যাল প্যারোল প্রোগ্রাম বন্ধ করার” নির্দেশ দেয়। প্রশাসন বর্তমানে প্রায় ৫,৩০,০০০ কিউবান, হাইতিয়ান, নিকারাগুয়ান ও ভেনেজুয়েলাবাসীর প্যারোল বাতিলের পরিকল্পনা করছে, যা চলতি মাসেই কার্যকর হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশকারীরা “এক্সপেডাইটেড রিমুভাল” নামে পরিচিত দ্রুত নির্বাসন প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে পারে। তবে যারা আইনি সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করেছেন কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে “অ্যাডমিট” হননি, তাদের দ্রুত নির্বাসনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি মানবিক প্যারোল প্রোগ্রামের মাধ্যমে ২,৪০,০০০ ইউক্রেনীয় ছাড়াও ৫,৩০,০০০ কিউবান, হাইতিয়ান, নিকারাগুয়ান ও ভেনেজুয়েলাবাসী এবং ৭০,০০০ আফগান যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পেয়েছিল। এছাড়া এক মিলিয়নেরও বেশি অভিবাসী CBP One নামে একটি অ্যাপ ব্যবহার করে বৈধ সীমান্ত ক্রসিংয়ের জন্য সময় নির্ধারণ করেছিলেন।
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি বাইডেন প্রশাসনের এই প্রোগ্রামগুলো বন্ধ করবেন। জানুয়ারিতে তিনি অভিবাসন সম্পর্কিত নির্দিষ্ট প্যারোল প্রোগ্রামের আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করেন, যার ফলে ইউক্রেনের লিয়ানা আভেতিসিয়ান ও তার পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির ফলে আফগান মিত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাফি নামে এক সাবেক আফগান গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যিনি CBP One অ্যাপের মাধ্যমে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন, তার প্যারোল স্ট্যাটাস ফেব্রুয়ারিতে বাতিল করা হয়।
রাফি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুর (High-Value Targets) বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করতেন। তাকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে দেশত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই আটক রয়েছেন।
২০ জানুয়ারির পর ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অভিবাসন নীতির কারণে রাফির মুক্তির আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিবর্তন অভিবাসীদের মধ্যে ব্যাপক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, বিশেষত যারা মানবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সূত্র: রয়টার্স