নোটিশ:
শিরোনামঃ
বিজিবির পা ধরে ক্ষমা চাইলো বিএসএফ: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু হচ্ছে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশীয় প্রযুক্তিতে রেল টার্ন টেবিল উদ্ভাবন করে আন্তর্জাতিক সম্মান পেলেন প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবু ইউরোপে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয় সরাসরি ট্রেন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ: লালমনিরহাটে আন্দোলন তীব্র উপদেষ্টাদের এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪০, আহত ১২০০, নেপথ্যে ইসরায়েল জাবিতে হামলার ঘটনায় ২৫৯ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কৌশল: ‘মব’ সৃষ্টি করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য

পশ্চিম তীরের নাম ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ রাখার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৫০ বার দেখা হয়েছে
West bank will be named as Judea and Samaria
ইসরায়েলের বিতর্কিত নিরাপত্তা প্রাচীরের অংশ, যা দখলকৃত পশ্চিম তীরের আবু দিস শহরকে জেরুজালেম থেকে পৃথক করেছে। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এমন একটি নতুন আইন আনতে যাচ্ছে যা তেল আবিবের মালিকানার সিলমোহর দেবে এমন এক ভূখণ্ডের ওপর, যা আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিন হিসেবে স্বীকৃত।

নতুন আইন ও তার প্রেক্ষাপট

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সংসদ সদস্যরা একসঙ্গে দুটি বিল উপস্থাপন করেছেন, যার লক্ষ্য হলো ‘ওয়েস্ট ব্যাংক’ (পশ্চিম তীর) নামটি বাদ দিয়ে এর পরিবর্তে বাইবেলে ব্যবহৃত ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ নাম চালু করা।

প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনির আবাসভূমি, পশ্চিম তীর হলো সেই অঞ্চল, যা ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম ও গাজার সঙ্গে দখল করেছিল। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই বাইবেলের উল্লেখ করে দাবি করে আসছে যে এই ভূখণ্ড তার ঐতিহাসিক অধিকারভুক্ত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজার ওপর চালানো যুদ্ধকেও ধর্মীয় ভিত্তিতে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেখানে অন্তত ৪৮,২৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি নেসেট (সংসদ) ও মার্কিন সিনেটে প্রস্তাবিত এই আইন দুটিও বাইবেলের উদ্ধৃতির ওপর ভিত্তি করে পশ্চিম তীরের নাম পরিবর্তনের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটি সেই অঞ্চল, যা ভবিষ্যতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হওয়ার কথা।

আইনগুলোর মূল বক্তব্য

ইসরায়েলি বিলের ভাষায় বলা হয়েছে, “জুদিয়া ও সামারিয়া হলো ইহুদি জনগণের মাতৃভূমির অবিচ্ছেদ্য অংশ,” কারণ এখানেই তাদের পূর্বপুরুষ, নবী, সাধক ও রাজারা বসতি স্থাপন করেছিলেন।

একইভাবে, মার্কিন বিলটিতে বলা হয়েছে যে পশ্চিম তীরকে ‘ইসরায়েলের প্রভাবাধীন অঞ্চল’ হিসেবে দেখানোর ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূর করতে হবে এবং এটিকে ‘ঐতিহাসিকভাবে সঠিক’ নাম – জুদিয়া ও সামারিয়া – দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতামত

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাম পরিবর্তনের এই উদ্যোগ ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে আরও বৈধতা দেওয়ার প্রচারণার অংশ।

আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলোকাস্ট ও গণহত্যা অধ্যয়নের অধ্যাপক ওমর বার্তোভ বলেছেন, “পশ্চিম তীর আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধভাবে দখলকৃত ভূখণ্ড। ইসরায়েল যেভাবেই এর নাম পরিবর্তন করুক না কেন, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ।”

তিনি আরও বলেন, ১৯৬৮ সালের ২২ জুলাই ইসরায়েলের সরকারিভাবে ‘পশ্চিম তীর’ নাম পরিবর্তন করে ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে, ইসরায়েলি সরকার সমস্ত রাষ্ট্রীয় নথিতে এই নাম ব্যবহারের নির্দেশ দেয়। তাই নতুন আইন আনার কোনো বাস্তব প্রয়োজন নেই; এটি কেবল প্রচারণামূলক উদ্যোগ।

“গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফিলিস্তিনিরা এই ভূমির আদিবাসী, এবং জায়নিস্ট উপনিবেশ স্থাপন ও রাষ্ট্র নির্মাণের কারণে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে।”

পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণ ও সামরিক অভিযান বেড়েছে। এতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ইসরায়েল তার দখলদারিত্ব আরও পাকাপোক্ত করার সুযোগ পায়। ট্রাম্পের মনোনীত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে দেখানোর পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন।

যদিও ১৯ জুলাই ২০২৪, আন্তর্জাতিক আদালত (ICJ) এক ঐতিহাসিক রায়ে বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ইসরায়েলের ‘ধাপে ধাপে জাতিগত নির্মূল’ নীতি

ইসরায়েল ক্রমাগত নতুন বসতি স্থাপন করে ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে।

১৯৯৩ সালে পশ্চিম তীরে (পূর্ব জেরুজালেম বাদে) ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা ছিল ১,১০,০০০। ২০২৩ সালে এটি বেড়ে ৫,০০,০০০-র বেশি হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পুরো পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করে, যদিও ফাতাহ-নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (PA) কিছু জনবহুল এলাকায় সীমিত শাসন পরিচালনা করে।

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক রিচার্ড ফক বলেন, এই নাম পরিবর্তন প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং এটি নেতানিয়াহু-ট্রাম্পের একত্রিত কৌশলের প্রতিফলন।

“এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা আরও চরমে পৌঁছাবে।”

আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন

ফিলিস্তিনি পক্ষে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির উল্লেখ রয়েছে:

  • চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৪৯ অনুযায়ী, কোনো দখলদার রাষ্ট্র দখলকৃত অঞ্চলে তার নাগরিকদের স্থানান্তর করতে পারে না।
  • জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক আদালত একাধিকবার ঘোষণা করেছে যে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের করণীয়

অধ্যাপক রিচার্ড ফক বলেন, “বিশ্বের সরকার ও গণমাধ্যমগুলোর উচিত ইসরায়েলের এই প্রচেষ্টার বিপরীতে অবস্থান নেওয়া।”

১৯৬৭ সালের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখল সাময়িক হবে। কিন্তু ইসরায়েল কখনোই এটি বাস্তবায়ন করেনি।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রদূত এলিস স্টেফানিক বলেছেন, “ইসরায়েলের সম্পূর্ণ পশ্চিম তীরে বাইবেল অনুসারে অধিকার রয়েছে।”

বিশ্লেষক অ্যান্টনি লোয়েনস্টেইন বলেন, “২০২৫ সালে এসে ইসরায়েল যদি এখনো বাইবেলের ভিত্তিতে উপনিবেশ স্থাপনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে এটি একটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ও অবৈধ উদ্যোগ।”

“ইসরায়েল ক্রমেই একটি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। হাজার হাজার বছর ধরে এখানে আরবরা বাস করছে। তাদের শুধু আধ্যাত্মিক নয়, আইনি ভিত্তিতেও এই ভূমিতে বসবাসের পূর্ণ অধিকার রয়েছে।”

লেখক: কাজিম আলম (টিআরটি ওয়ার্ল্ড স্টাফ রাইটার)

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT