বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিকসমৃদ্ধ নিবন্ধিত ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর যৌথ প্রচেষ্টায়। তবে বর্তমানে এ ডাটার মালিকানা এককভাবে দাবি করছে ইউএনএইচসিআর, যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি চললেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি।
ডাটাবেজ ফেরত চায় সরকার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গা ডাটাবেজটি ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। অন্যদিকে, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখতে নির্বাচন কমিশন, পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ডাটাবেজ চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে।
নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের তথ্য না থাকায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং জন্ম নিবন্ধন পাওয়ার অনৈতিক প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দালাল চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করছে এবং বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ও অবস্থান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এদের মধ্যে ৩৯ হাজার ৮৪১ জন এতিম শিশু। রোহিঙ্গাদের মূল বসতি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪৪টি, যাদের সদস্য সংখ্যা ৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৪৭ জন। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানকালে আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ
ডাটাবেজ পেতে সরকারের পদক্ষেপ
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার কাছে থাকা রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে, যেখানে নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ শুধু ইউএনএইচসিআরের সম্পদ নয়, এটি বাংলাদেশ সরকারেরও সম্পদ। তবে এখন পর্যন্ত সরকার এ ডাটা হাতে পায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার ডেস্কের পরিচালক সুজন দেবনাথ বলেন, ডাটাবেজ হস্তান্তরের বিষয়ে সরকার ও ইউএনএইচসিআর একমত। এটি শিগগিরই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আসবে এবং আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এই তথ্যভান্ডার পাওয়ার চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরও জানান, খুব শিগগিরই একটি কারিগরি কমিটির বৈঠক হবে, যেখানে ডাটা হস্তান্তরের সময়সীমা নির্ধারিত হবে। একইসঙ্গে, ডাটাবেজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
ইউএনএইচসিআরের অনড় অবস্থান
রোহিঙ্গা ডাটাবেজের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরও এখনো তা সরকারকে সরবরাহ করেনি ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি এসএম জিল্লুর রহমান বলেন, অফিস স্থানান্তরের কারণে এই মুহূর্তে ডাটাবেজ হস্তান্তর নিয়ে বিস্তারিত জানানো সম্ভব নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গাদের তথ্যভান্ডার সরকারের হাতে এলে তাদের অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নেওয়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। ফলে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত অনিয়ম রোধ করা সহজ হবে।
আমাদের পথ চলায় সঙ্গী হন আপনিও: