তুরস্কের বিরোধী দলীয় নেতারা এবং সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তারা ইস্তাম্বুলের মেয়রকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। গত এক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় ধরনের গণবিক্ষোভ। ব্যাপক গ্রেপ্তার ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পরও আন্দোলনকারীরা পিছু হটতে রাজি নন।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সোমবার এই আন্দোলনকে ‘নাটক’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটি শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে।
গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে এবং ইমামোগলুর মুক্তি, ন্যায়বিচার ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছে।
একটি আদালত রোববার দুর্নীতির অভিযোগে ইমামোগলুকে বিচারের আগ পর্যন্ত কারাগারে রাখার নির্দেশ দেয়। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিরোধী দল, ইউরোপীয় নেতারা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতন্ত্রবিরোধী বলে অভিহিত করেছে।
সরকারিভাবে এসব সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও জনগণ নিয়মিত রাস্তায় নেমেছে। বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করলেও গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ লাঠিচার্জ ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে এবং এ পর্যন্ত ১,৪০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইস্তাম্বুলের সারাচানে পার্কে উপস্থিত হয়ে বলেন,
“আমি যতবার সম্ভব এখানে আসার চেষ্টা করব, কারণ সরকার আমাদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করেছে। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম গ্রেপ্তার হতে পারি, কিন্তু এখন আর ভয় পাচ্ছি না।”
প্রতিদিনের মূল বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে শহর ভবন ও প্রাচীন রোমান জলাধারের মধ্যবর্তী পার্কে। এখানে বিরোধী নেতারা বক্তৃতা দিচ্ছেন, অন্যদিকে কয়েকশত বিক্ষোভকারী স্লোগান দিয়ে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিচ্ছে।
বিক্ষোভ ক্রমশ এরদোয়ানের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। তিনি এসব প্রতিবাদকে ‘রাস্তার সন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করেছেন।
সোমবার আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তিনি বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-কে জনগণকে উসকানি দেওয়ার জন্য দায়ী করেন এবং বলেন, এই ‘নাটক’ শেষ হলে তারা দেশের বিরুদ্ধে করা ‘অপকর্মের’ জন্য লজ্জিত হবে।
মঙ্গলবার ইফতারের সময় একদল তরুণের সঙ্গে কথা বলার সময় এরদোয়ান বলেন,
“যারা আমাদের রাস্তায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায় এবং দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে চায়, তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদের পথ বন্ধ।”
সরকার দাবি করছে, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং এর ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। তবে সিএইচপি জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে।
সিএইচপি চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল প্রতিদিন সন্ধ্যায় সারাচানে পার্কে বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মঙ্গলবারের শেষ সমাবেশটি হবে “একটি বিশাল সমাপ্তি এবং নতুন আন্দোলনের সূচনা”। তিনি ইমামোগলুর সমর্থনে আরও বিক্ষোভের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শনিবার সিএইচপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবে এবং বুধবার দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিল ইস্তাম্বুলের ভারপ্রাপ্ত মেয়র নির্বাচন করবে।
সোমবার পার্কে এক চিকিৎসক বলেন, তিনি পরবর্তী দিনগুলোতে ইমামোগলুর কারাগারের সামনে প্রতিবাদে অংশ নিতে চান।
“আমি চাই, এই আন্দোলন কখনো বন্ধ না হোক। আমরা ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য এখানে আছি, কারণ আমরা মনে করি না যে আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করছি।”
সোমবার সন্ধ্যায় ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক গালাতা ব্রিজে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সোমবার থেকে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করেছে, এবং মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা একদিনের ধর্মঘট পালন করেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা তুর্কি কর্তৃপক্ষকে মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে মঙ্গলবার একটি আদালত সাতজন সাংবাদিককে ‘বিক্ষোভের সময় পুলিশের সতর্কতা উপেক্ষার’ অভিযোগে বিচারের আগ পর্যন্ত কারাগারে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এদের মধ্যে এএফপি-র ফটোগ্রাফার ইয়াসিন আকগুলও রয়েছেন।
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর থেকে তুরস্কের আর্থিক বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। মুদ্রার দরপতন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রিজার্ভ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক বলেছেন, কর্তৃপক্ষ বাজারের অস্থিরতা দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং এই পরিস্থিতি সাময়িক।
সূত্র: রয়টার্স