গাজা সংকট ঘিরে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে জনরোষ তুরস্কের ফাস্ট-ফুড খাতে বড় ধাক্কা এনেছে। এর জেরে কেএফসি তুরস্কে তাদের ৫৩৭টি রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিষ্ঠান ‘ইশ গিদা এ.এস.’ দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত আসে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে তুরস্কে কেএফসির কার্যক্রম সাময়িকভাবে থেমে গেছে এবং প্রায় সাত হাজার কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, যার প্রভাব তুরস্কের খাদ্য শিল্পেও পড়েছে।
ইশ গিদার পতনের কারণ হিসেবে দেখা গেছে আর্থিক বিশৃঙ্খলা ও বিক্রির বড় রকমের পতন। এই পতনের পেছনে রয়েছে গাজা পরিস্থিতির জেরে পশ্চিমা ব্র্যান্ড বর্জনের ঢেউ, যার ফলে কেএফসির বিক্রি প্রায় ৪০% কমে যায়। ইসরায়েলপন্থী অবস্থানের অভিযোগে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে যেমন তুরস্ক, তেমনই অন্যান্য অঞ্চলেও পশ্চিমা পণ্যের বিরুদ্ধে এই বয়কট তীব্রতর হয়েছে।
ইস্তানবুলের এক কর্মী আয়লিন দেমির বলেন, “এটা কেবল খাবারের বিষয় নয়—এই ব্র্যান্ডগুলো এখন অনেকের কাছে ভিন্ন বার্তা বহন করছে।” অনেকেই মনে করেন, এই বয়কট এক ধরনের রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার উপায়।
ইশ গিদা শুধু কেএফসিই নয়, তুরস্কে ২৫৪টি পিৎজা হাট আউটলেটও পরিচালনা করত। তারা বর্তমানে ২১৪ মিলিয়ন ডলারের দেনায় জর্জরিত। কেএফসির মূল কোম্পানি ‘ইয়াম! ব্র্যান্ডস’ ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগে ইশ গিদার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে, যা কোম্পানিটির আর্থিক পতনকে আরও গতিশীল করে তোলে। তুরস্কের একটি আদালত ইশ গিদাকে তিন মাসের ঋণ পুনর্গঠনের সময় দিলেও বিশ্লেষকদের মতে, পুনরুদ্ধার খুব একটা সম্ভাবনাময় নয়।
আঙ্কারার সাবেক কেএফসি কর্মী মেহমেত ইয়লমাজ বলেন, “এই বন্ধে বিশেষ করে ছোট শহরগুলোতে বড় ধাক্কা লাগবে, যেখানে কেএফসি দীর্ঘদিন ধরেই কর্মসংস্থানের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস ছিল। আমাদের জন্য এটা শুধু চাকরি নয়, জীবনের একটা বড় অংশ।”
ইয়াম! ব্র্যান্ডস এখনও তুরস্কে ফেরার কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, এই শূন্যতা পূরণে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডগুলো যেমন ম্যাকডোনাল্ডস বা বার্গার কিং এগিয়ে আসতে পারে।
ফলে আপাতত কেএফসির অনুপস্থিতি তুরস্কের ফাস্ট-ফুড বাজারে একটি বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যে ব্র্যান্ডটি ভবিষ্যতে তুরস্কে তার অবস্থান ফিরে পেতে পারে কিনা।