যুদ্ধের বাজি খেলায় ট্রাম্প: বিজয় না বিপর্যয়? - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
হরমুজ প্রণালী বন্ধের ইঙ্গিত ইরানি পার্লামেন্টে, বিশ্ববাজারে আতঙ্ক উত্তরায় সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা আটক স্বাস্থ্য ও জীবন বীমার আওতায় রুয়েট শিক্ষার্থীরা, বছরে পাবেন এক লক্ষ ১০ হাজার টাকার স্বাস্থ্যসেবা ইসরায়েলের মিত্র ভারত এখন ইরানের পাশে! ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে যা বলছে ওআইসি লিখছে এআই, ঘুমাচ্ছে মস্তিষ্ক নবীজিকে কটূক্তির অভিযোগে বাবা-ছেলে আটক, উত্তপ্ত লালমনিরহাট সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের পর্যালোচনায় ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধের বাজি খেলায় ট্রাম্প: বিজয় না বিপর্যয়? অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১২৫ দফা রাবি ছাত্রশিবিরের

যুদ্ধের বাজি খেলায় ট্রাম্প: বিজয় না বিপর্যয়?

সাবাস বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫
  • ১৩ বার দেখা হয়েছে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ইরানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে ‘বিশাল সামরিক জয়’ অর্জন করেছেন। তবে এই দাবি কতটা সত্য, তা সময়ই বলে দেবে। এখনই একে নিঃসন্দেহে সাফল্য বলা যাচ্ছে না, বরং এটা স্পষ্ট যে তিনি আমেরিকাকে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছেন—যা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের দিকে গড়াতে পারে। এমন আশঙ্কার কথাও ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন।

ইরানে এই সামরিক অভিযানের আইনি ভিত্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে অন্তত তিনটি বড় অনিশ্চয়তা রয়েছে, যা শুধু আমেরিকার নয়, সারা বিশ্বের ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করতে পারে।

প্রথম অনিশ্চয়তা: ইরানের প্রতিক্রিয়া

ইরান কেমনভাবে পাল্টা জবাব দেবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, আমেরিকা যদি এই সংঘাতে সামরিকভাবে জড়ায়, তবে তার পরিণতি পূরণ করা সম্ভব হবে না।

ইরান বিভিন্নভাবে জবাব দিতে পারে—ইরাক বা বাহরাইনে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা, সাইবার হামলা, দূতাবাস লক্ষ্য করে হামলা বা কোনো গোষ্ঠীর মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা এর মধ্যে রয়েছে। হরমুজ প্রণালি আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করাও হতে পারে তাদের কৌশল, যা বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।

ইতিহাস বলছে, ১৯৮৮ সালে প্রণালিতে একটি মাইন বসিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল ইরান। এমন হামলার পুনরাবৃত্তি এবারও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রণালিটি পুনরায় সচল করা সম্ভব হলেও তার খেসারত অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে বড় হতে পারে।

২০২০ সালে কাসেম সোলাইমানি হত্যার পর ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল মার্কিন ঘাঁটির দিকে এবং দুর্ঘটনাবশত ইউক্রেনের যাত্রীবাহী একটি বিমানও ভূপাতিত হয়েছিল। এবার পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। তবে ইরানের পাল্টা ক্ষমতা কিছুটা সীমিত হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে—বিশেষ করে ইসরায়েলি হামলার পর হরমুজ প্রণালিতে তাদের কার্যক্ষমতা কমে থাকতে পারে, যা তাদের অর্থনীতি ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

দ্বিতীয় অনিশ্চয়তা: পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—এই হামলা কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে পেরেছে, না কি উল্টো তা আরও ত্বরান্বিত করেছে?

ফোরদোসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সেগুলো কতটা কার্যকরভাবে ধ্বংস হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে, ‘বাংকার বাস্টার’ বোমাও ফোরদোর মতো গভীর পাহাড়ের নিচে অবস্থিত স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারবে কি না।

গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, ইরান উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করেছে, যা দিয়ে কয়েকটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব। যদিও ট্রাম্পের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, ইরান তখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছিল না। কিন্তু এখন ইরান ভেবে নিতে পারে, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র অপরিহার্য।

তৃতীয় অনিশ্চয়তা: সংঘাতের সমাপ্তি, না দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের সূচনা?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা হলো—এই সামরিক অভিযান কি শেষ পর্ব, না কি একটি দীর্ঘ ও বিপজ্জনক যুদ্ধের সূচনা?

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিশ্বাস করেন, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সরকার উভয়কেই শেষ করে দেবে। কিন্তু অতীতে ইরাক যুদ্ধেও তার এমন ধারণা ছিল, যা শেষ পর্যন্ত ইরানকেই শক্তিশালী করেছে।

ইরানের সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি হয়তো ধ্বংস করা গেছে, কিন্তু তাদের বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা তো মুছে ফেলা যায়নি। সুতরাং যদি বর্তমান শাসন টিকে থাকে, তবে কর্মসূচির গতি সাময়িকভাবে কমলেও তা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে বলা যাবে না।

আর ইরানি জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে থাকলেও, তারা বাইরের সামরিক হস্তক্ষেপ সমর্থন করেন না। শান্তি পুরস্কারজয়ী অধিকারকর্মী নারগেস মোহাম্মদি প্রকাশ্যে বোমা হামলার বিরোধিতা করেছেন এবং ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন সংঘাতে না জড়াতে।

ইরানে সরকারবিরোধী মানসিকতা থাকলেও, সামরিক আগ্রাসন বরং উল্টোভাবে দেশটিকে আরও কট্টর মতাদর্শের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

শেষ কথা: এখনো উদ্‌যাপনের সময় নয়

মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামানো উচিত, তবে কূটনীতির পথ ছেড়ে সামরিক পথে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ও সেনাদের অপ্রয়োজনে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের সাফল্যের ভাষণ এখনই আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। কারণ সামনের দিনগুলোতে কী ঘটবে, তা এখনও অনিশ্চয়তায় ঢাকা।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস (লেখক: নিকোলাস ক্রিস্টোফ); অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT