নোটিশ:

পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়: মুসলিম নারীর অনন্য অবদান

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫
  • ২৯ বার দেখা হয়েছে
ফাতিমা আল-ফিহরি, আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়, মুসলিম নারী, মরক্কো, ফেজ শহর, ইসলামি শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, প্রাচীন লাইব্রেরি, জ্ঞানচর্চা, ইউনেস্কো, গিনেস বুক, ইসলামি সভ্যতা, উচ্চশিক্ষা, মুসলিম বিজ্ঞানী, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

ইতিহাসের পাতায় নারীদের অসাধারণ কৃতিত্বের উদাহরণ অনেক রয়েছে। তেমনই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ আল-ফিহরি। তিনি শুধু নিজে শিক্ষিত হননি, বরং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গড়ে তুলেছেন বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়—মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী আল-কারাওইন।

নারী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আজ আমরা যে কাঠামো বুঝি, তার সূচনা হয়েছিল এই আল-কারাওইন থেকেই। ইউনেস্কো ও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, এটি বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যা ৮৫৯ সালে মরক্কোর ফেজ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। অক্সফোর্ড (১০৯৬), বোলোগ্না (১০৮৮) বা আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের (৯৭০) আগেই এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং এটি এখনো চালু রয়েছে।

জ্ঞানপিপাসু এক নারীর পথচলা

ফাতিমা আল-ফিহরির জন্ম ৮০০ সালে, তৎকালীন তিউনিসিয়ার কাইরাওয়ান শহরে। তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশোদ্ভূত এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেয়ে। ভাগ্য অন্বেষণে তার পরিবার পাড়ি জমায় মরক্কোর ফেজ শহরে, যেখানে তার পিতা সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। ফাতিমা ও তার বোন মরিয়ম ইসলামি ফিকাহ, হাদিস ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার সুযোগ পান।

আরও পড়ুনঃ

কেন আমি আমার বাচ্চাকে ‘গ্যাজেট’ দেবো না, স্বাধীনতা দেবো না।

ঢাবিতে হিজাব বিড়ম্বনা: শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টে নতুন সিদ্ধান্তে ঢাবি প্রশাসন

শিক্ষা ও কল্যাণে দানশীলতা

ফাতিমা অল্প বয়সেই পিতৃসূত্রে প্রচুর সম্পদের উত্তরাধিকারী হন। বিলাসী জীবনে না গিয়ে তিনি সমাজের কল্যাণে এই সম্পদ ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় ফেজ শহরে আশ্রয় নেওয়া মুসলিম অভিবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই তিনি একটি বড় মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন, যা শুধু ইবাদতের স্থান নয়, বরং শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

আল-কারাওইন: মসজিদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর

ফাতিমার নেতৃত্বে নির্মিত এই মসজিদটি দ্রুতই জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে ইসলামি শিক্ষা ছাড়াও গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, ভূগোল, ভাষাবিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ে পাঠদান শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদানও চালু হয়, যা পরবর্তীতে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার ভিত্তি গড়ে তোলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ও শিক্ষার্থীরা

দশম শতাব্দী থেকে আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়। মুসলমানদের পাশাপাশি ইহুদি ও খ্রিষ্টান পণ্ডিতরাও এখানে পড়াশোনা করেছেন। রেনেসাঁ যুগের বিখ্যাত মানচিত্রবিদ মুহাম্মদ আল ইদ্রিসি, দার্শনিক ইবনে রুশদ (অ্যাভেরোস), খ্রিষ্টান পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টারসহ অনেক মনীষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও লাইব্রেরি

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত বিশাল লাইব্রেরিটি বিশ্বের প্রাচীনতম লাইব্রেরিগুলোর একটি। এখানে সংরক্ষিত দুর্লভ পান্ডুলিপির মধ্যে রয়েছে ইবনে খালদুনের আল-মুকাদ্দিমা, ইমাম মালেকের মুয়াত্তা এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীসংক্রান্ত গ্রন্থ। কয়েকবার সংস্কারের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

অমর হয়ে আছেন ফাতিমা

৮৮০ সালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহীয়সী নারী। তার অবদান শুধু ইসলামি সভ্যতায় নয়, সমগ্র বিশ্বে শিক্ষার প্রসারে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তার প্রতিষ্ঠিত আল-কারাওইন আজও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, যা ১২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে।

একজন মুসলিম নারীর দূরদর্শী উদ্যোগ কেবল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, বরং আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেছিল—এটাই ফাতিমার সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়।

আমাদের পথ চলায় সঙ্গী হন আপনিও:

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT