চেন্নাই, ৮ মার্চ ২০২৫:
তামিল সিনেমার সুপারস্টার ও সদ্য রাজনীতিতে আসা থালাপতি বিজয় সম্প্রতি এক বিশাল ইফতার পার্টির আয়োজন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। গতকাল, ৭ মার্চ, চেন্নাইয়ের রোয়াপেট্টাহ এলাকায় অবস্থিত YMCA মাঠে এই ইফতার আয়োজন করেন বিজয়। এতে প্রায় ৩,০০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ইসলাম গ্রহণ নাকি ভোটের রাজনীতি?
বিজয়ের ইফতার পার্টিতে অংশ নেওয়া এবং মুসলমানদের সঙ্গে নামাজ আদায় করার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কেউ বলছেন, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন, আবার কেউ বলছেন, এটি নিছকই রাজনৈতিক চাল।
ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজয় শুধুমাত্র ইফতার আয়োজনই করেননি, বরং নিজেও রোজা রেখেছিলেন এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ইসলামিক রীতিনীতির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
সিনেমায় মুসলিমবিরোধী চরিত্র, বাস্তবে সম্প্রীতির বার্তা?
থালাপতি বিজয়ের সিনেমার দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি একাধিক চলচ্চিত্রে মুসলমান সম্প্রদায়কে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া তার একটি সিনেমা কুয়েতসহ কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যেখানে ইসলামিক সংস্কৃতিকে ভুলভাবে দেখানোর অভিযোগ ওঠে।
এমনকি বলিউডসহ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি সাধারণ চিত্র হলো, মুসলিম সম্প্রদায়কে জঙ্গি বা উগ্রবাদী হিসেবে দেখানো। বিজয়ের চলচ্চিত্রেও এমন চিত্র একাধিকবার উঠে এসেছে। তাহলে হঠাৎ করে ইসলামের প্রতি তার এই আন্তরিকতা কেন?
নতুন রাজনৈতিক দল, নতুন কৌশল?
বিজয়ের এই ইফতার আয়োজন কোনো হঠাৎ করা সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি তার রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন— ‘তামিলাগা ভেত্ত্রি কাজাগাম’ (TVK)।
রাজনীতিতে নতুন হলেও, তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ রয়েছে, যাদের ভোট যে কোনো নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই অনেকে মনে করছেন, ইফতার পার্টি আয়োজনের মাধ্যমে বিজয় মূলত মুসলিম ভোটব্যাংকের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিতে চেয়েছেন।
সাধু সাজানোর রাজনীতি?
বিজয়ের নামাজ পড়া, দোয়া-দরুদ পাঠ করা এবং কুরআন পড়ার ছবি ও ভিডিও দেখে অনেকেই ভাবছেন, তিনি হয়তো ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, “এটি নিখুঁত রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করার এটি একটি সুপরিকল্পিত পদ্ধতি।”
এদিকে, অনেক মুসলিম নাগরিকই বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন। একজন মুসলিম সামাজিক কর্মী বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে রাজনীতি করা নিন্দনীয়। বিজয় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য মুসলমানদের আবেগ নিয়ে খেলছেন। এটি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।”
শেষ কথা
থালাপতি বিজয়ের এই ইফতার আয়োজন কি সত্যিই আন্তরিকতার প্রতিফলন, নাকি এটি নিছক রাজনৈতিক চাল?— এ নিয়ে বিতর্ক চলবে আরও অনেকদিন। তবে এটা নিশ্চিত যে, দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে তিনি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন এবং সামনের নির্বাচনে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটকে কেন্দ্র করেই তার কৌশল সাজাচ্ছেন।