বাংলাদেশের স্টার্টআপ জগতের উদীয়মান প্রতিষ্ঠান শপআপ সৌদি আরবভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর সরবরাহকারী কোম্পানি ‘স্যারি’-এর সঙ্গে একীভূত হয়ে নতুন একটি কোম্পানি গঠন করেছে। এই নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিল্ক’ গ্রুপ। গঠনের পরপরই সিল্ক গ্রুপ ১১ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে, যা বর্তমান বিনিময় হারে (১ ডলার = ১২২ টাকা) বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকার সমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শপআপ ও সারি শেয়ার অদলবদলের মাধ্যমে এই একীভূতকরণ সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আজ বুধবার চার দিনব্যাপী একটি বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই একীভূতকরণ ও বিনিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রবাসীদের জন্য সহজ পণ্য সরবরাহের লক্ষ্য
শপআপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফিফ জামান বলেন, “সৌদি আরবে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও বেশি। এই প্রবাসীরা যাতে সহজে বাংলাদেশি পণ্য পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে সারির সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, বর্তমানে সৌদি আরবে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি সীমিত এবং মুষ্টিমেয় কয়েকটি কোম্পানির হাতে। “আমরা এই পরিসর বাড়াতে চাই এবং দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য রপ্তানির পথ সুগম করতে কাজ করছি,” যোগ করেন তিনি।
স্বতন্ত্র কার্যক্রম, নতুন মালিকানা
সূত্র জানায়, শপআপ ও সারি একীভূত হলেও দুটি প্রতিষ্ঠানই নিজ নিজ নামে ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তবে এ দুই কোম্পানির মালিকানায় থাকবে সিল্ক গ্রুপ। নতুন এই গ্রুপ ইতোমধ্যে বড় ধরনের বিনিয়োগ পেয়েছে। সৌদি সরকারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) সানাবিল ইনভেস্টমেন্ট, পেপ্যালের সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল, ই-বের প্রতিষ্ঠাতা পিয়ের ওমিডিয়ার, কুয়েত সরকারের ওয়াফ্রা, কাতার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক তহবিল থেকে এই বিনিয়োগ এসেছে।
সিল্ক গ্রুপের পরিকল্পনা
আফিফ জামান জানান, সিল্ক গ্রুপ শুধু সৌদি আরবে নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। “এই একীভূতকরণের মাধ্যমে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পণ্য সরবরাহ সহজ করার পাশাপাশি আঞ্চলিক বাজারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে চাই,” বলেন তিনি।
শপআপ ও সারি: এক নজরে
২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করা শপআপ বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী হোলসেল মার্কেট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত নিত্যপণ্য সরবরাহে তাদের ২০০টির বেশি পরিবেশক কেন্দ্র রয়েছে, যা দেশের প্রায় ৫ লাখ মুদি দোকানে পণ্য পৌঁছে দেয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োজিত।
অন্যদিকে, সারি মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রযুক্তিনির্ভর বিটুবি মার্কেট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। তারা উৎপাদকদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে দ্রুত সরবরাহ করে। সারি বর্তমানে প্রায় ২ হাজার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে এবং ৩০ হাজারের বেশি পণ্য সরবরাহ করে।
বিনিয়োগের প্রভাব
শপআপের কর্মকর্তারা জানান, এই নতুন বিনিয়োগসহ প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত মোট ৩১ কোটি ১০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। এর আগে তারা যুক্তরাষ্ট্রের টাইগার গ্লোবাল, সেকোইয়া ক্যাপিটাল, টেনসেন্টের প্রসুসসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ পেয়েছিল। ২০২৩ সালে ফাস্ট কোম্পানি শপআপকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তৃতীয় সেরা উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
শপআপের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে তাদের রাজস্ব আয় ছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। কোম্পানিটি জানায়, তাদের মূল ব্যবসা এখন লাভজনক।
এই একীভূতকরণ ও বিনিয়োগ বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।