শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুরের সীমান্ত এলাকায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্টরা এসব সীমান্তকে নিরাপদ করিডোর হিসেবে ব্যবহার করছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যমতে, ভৌগোলিক সুবিধার কারণে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুরের সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি, তুরা ও ডাউকি এলাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সীমান্তের বিভিন্ন বাজার ও জনপদে অবস্থান করে বাংলাদেশি মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছেন।
স্থানীয়দের দাবি, গত সাত মাসে আওয়ামী লীগের অন্তত এক হাজার নেতাকর্মী দালাল ও প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ সদস্যের সহায়তায় চুপিসারে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিছু নেতা মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে আবার ভারতে ফিরে যাচ্ছেন।
সীমান্তে সন্দেহজনক ব্যক্তির আনাগোনা
ভারতের দিক থেকে আসা পাগলবেশী বেশ কিছু ব্যক্তিকে সীমান্ত এলাকায় দেখা যাচ্ছে, যারা হিন্দি ভাষায় অসংলগ্ন কথা বলছেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, এরা প্রকৃতপক্ষে মানসিক রোগী নন, বরং অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সীমান্তে অবস্থান করছেন।
দালালদের চোরাচালান নেটওয়ার্ক ও মোটা অঙ্কের লেনদেন
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে মানব পাচার, মাদক ব্যবসা ও অবৈধ পণ্যের লেনদেন চালিয়ে আসা দালালচক্র এখন আওয়ামী নেতাদের ভারতে পারাপারে সক্রিয় হয়েছে। দালালদের মাধ্যমে একেকজন শীর্ষ নেতাকে সীমান্ত পার করাতে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের জন্যও নির্দিষ্ট ‘রেট’ নির্ধারণ করা হয়েছে—জেলা পর্যায়ে ৫০ লাখ ও উপজেলা পর্যায়ে ৩০ লাখ টাকা।
স্থানীয়দের হিসাব অনুযায়ী, এই দালালচক্র এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিএসএফের সম্পৃক্ততা ও নিরাপত্তা হুমকি
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কিছু সদস্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন। সীমান্তে বাংলাদেশি ও ভারতীয় দালালদের সক্রিয়তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে পলায়ন
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা নদীপথে ভারতে প্রবেশ করেছেন। বিশেষ করে ধোবাউড়া ও দুর্গাপুর সীমান্ত ব্যবহার করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বিজিবির নজরদারির অভাব ও দালালদের সক্রিয়তার কারণে সীমান্তে অবৈধ চলাচল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ভারতে আশ্রয় নেওয়া নেতাদের অবস্থান
তথ্যমতে, কলকাতা, শিলং, দিল্লি ও ত্রিপুরায় আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা অবস্থান করছেন। কলকাতার বিভিন্ন অভিজাত হোটেল, শপিংমল ও ক্যাফেতে তাদের দেখা যাচ্ছে। অনেকে শিলিগুড়ি ও দিল্লিতে গোপনে সময় কাটাচ্ছেন।
প্রশাসনিক দপ্তরে আওয়ামী নেতাদের প্রভাব
সরকার পরিবর্তনের পরও ময়মনসিংহের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে।
সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সীমান্ত দিয়ে গোপন যাতায়াত ও দালালচক্রের কার্যক্রম জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং অবৈধ পারাপার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।