যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনে বিমান হামলা চালানোর ঘোষণা দেয়ার পরেই আমেরিকার রাজনীতিবিদদের মধ্যে উদ্দীপনা ও তীব্র প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, এই অভিযানে ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান স্ট্রাইক শেষ হয়েছে, ট্রাম্পের ভাষায় “খুব সফল” । মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি বলেছিলেন — ইরানের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় নিবেন কিন্তু দুই দিন পরই হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার খবর পাওয়ার পরই মার্কিন রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া ছিল উৎসাহের সমাহার ও তীব্র নিন্দার মিশ্রণ—এই দেশের রাজনৈতিক ব্যবধানের প্রতিফলন, যেখান থেকে পরিষ্কার যে, যুক্তরাষ্ট্র আবার একবার বিদেশি সামরিক মিশনের মুখোমুখি।
এসব ঘোষণা আসার পরেই কংগ্রেসম্যান রো খান্না জানান, ট্রাম্প কোনো বৈধ সংবিধানিক অনুমতি ছাড়া হামলা চালিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখনই ওয়াশিংটনে ফিরে এসে ‘War Powers Resolution’–এ অভিনিবেশ করতে হবে যাতে প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি সামরিক অভিযান চালাতে না পারেন । রিপাবলিকান থমাস ম্যাসিও এই হামলাকে ‘সংবিধানবিরুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ।
সেনেট Minority Leader চাক সুমার বলেন, প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ শুরু করার আগে ‘War Powers Act’ পালন করা বাধ্যতামূলক। তিনি ডেমোক্র্যাট নেতা জন থুনকে কেন্দ্রে ডাকা এবং তাড়াতাড়ি একটি ভোট ডেকে আনার আহ্বান জানান ।
ভারমন্টের সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্ড্রিয়া ওকাসিও‑কোর্টেজ বলেছিলেন যে প্রেসিডেন্টের এই কর্মকাণ্ড “ভীতিকরভাবে সংবিধানবিরুদ্ধ” এবং ইমপিচমেন্টই সমাধান ।
আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্র্যাট হাকীম জেফ্রিস মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প আমেরিকান নাগরিকদের প্রতারিত করেছেন, যোদ্ধাদের সঠিক খবরে বিভ্রান্ত রেখেছেন এবং এই অভিযান সেনাদের জীবন বিপদের দিকে নিয়ে যাবে ।
ফেনশন, রিপাবলিকান সিনেটর জন ফেটারম্যান, যিনি ইসরায়েলের কঠোর সমর্থক, বলেছেন যে ইরান সন্ত্রাসের মদদদাতা এবং পারমাণবিক শক্তি অর্জন করলে বিশ্বে বড় বিপদের কারণ হবে। তিনি মন্তব্য করেন, এই অভিযান “সঠিক সিদ্ধান্ত” ।
সাউথ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, “এটি সঠিক পদক্ষেপ; আমাদের বিমানবাহিনী বিশ্বসেরা।” তিনি ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, “Fly, Fight, Win” ।
অন্যান্য একাধিক রিপাবলিকান—যেমন মার্কওয়াইন মুলিন—ও ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন ।
এই পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে—মার্কিন রাজনীতিবিদদের মধ্যে একদিকে রয়েছে ইসলামবিদ্বেষী ও কৌশল-সমর্থক, অপরদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কর্তৃত্ব ও সংবিধান রক্ষার লক্ষ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রগতিশীল ও মধ্যপন্থীরা। ফলে দেশে একটি বিভক্ত রাজনীতির দৃশ্য দুর্দান্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে শুধু ট্রাম্পই বিপর্যয়ের দিকে না নিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-ইরান সংঘাত বিশ্ব রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন দাঁড়িয়ে গেছে।