জাকাত ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি, যা সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য ফরজ। অনেকেই সাধারণ সম্পদের জাকাত সম্পর্কে জানলেও ঋণের ওপর জাকাত প্রদানের নিয়ম নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকেন। আসুন, এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নেওয়া যাক।
যে অর্থ অন্যকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে, তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত জাকাত ফরজ হয় না। তবে টাকা ফেরত পাওয়ার পর পেছনের বছরের জাকাত হিসাব করে পরিশোধ করতে হবে।
যদি ঋণের অর্থ এমন ব্যক্তির কাছে থাকে, যিনি সহজেই তা ফেরত দিতে পারেন, তাহলে ঋণদাতা ইচ্ছা করলে চলমান বছরের জাকাতের সঙ্গে ওই টাকার জাকাতও আগেভাগে দিয়ে দিতে পারেন। এতে পরবর্তীতে কাজা আদায়ের ঝামেলা থাকবে না।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে যদি ৬০,০০০ টাকা ঋণ দেওয়া হয় এবং ২০১৭ সালে তা ফেরত পাওয়া যায়, তবে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের মোট জাকাত ৪,৫০০ টাকা (প্রতি বছর ১,৫০০ টাকা হারে) পরিশোধ করতে হবে। এই পরিমাণ একসঙ্গে বা প্রতি বছর ধাপে ধাপে আদায় করা যেতে পারে।
যদি কোনো ঋণ এমন ব্যক্তির কাছে থাকে, যিনি ফেরত দিতে অপারগ বা গড়িমসি করছেন, তবে সেই ঋণের জাকাত অগ্রিম দেওয়া হবে না। আর যদি ঋণের অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ থাকে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে পাওয়া যায়, তাহলে নতুন করে জাকাতের সময় গণনা শুরু হবে বা বিগত এক বছরের জাকাত দেওয়া হবে।
স্বামীর কাছে স্ত্রী যে মোহরানা পান, তা হাতে পাওয়ার আগে জাকাত ফরজ হয় না। যদি হাতে পাওয়ার পর মহিলার অন্য জাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকে, তবে নতুন করে বছর গণনা শুরু হবে এবং এক বছর পর জাকাত দিতে হবে। কিন্তু যদি আগে থেকেই নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে মোহরানা যুক্ত করে মোট সম্পদের হিসাব অনুযায়ী জাকাত দিতে হবে।
ঋণ সাধারণত দুই কারণে নেওয়া হয়—
১. প্রয়োজনীয় খরচের জন্য ঋণ: মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য নেওয়া ঋণ জাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তবেই জাকাত ফরজ হবে।
২. ব্যবসা বা উন্নয়নমূলক ঋণ: ব্যবসা সম্প্রসারণ বা ভবন নির্মাণের জন্য নেওয়া ঋণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। শিল্পপতিরা সাধারণত এ ধরনের ঋণ বেশি নিয়ে থাকেন। যদি এসব ঋণ বাদ দেওয়া হয়, তাহলে অনেকের ওপর জাকাত ফরজ হবে না, যা ইসলামের বিধানের বিপরীত।
যেসব ব্যবসায়ী বাকিতে পণ্য বিক্রি করেছেন এবং পাওনা আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তারা সেই টাকাকে জাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত করে হিসাব করবেন। যদি এতে নিসাব পরিমাণ সম্পদ হয়, তবে জাকাত দিতে হবে।
ঋণ সংক্রান্ত জাকাতের বিধান নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। নির্দিষ্ট শর্ত মেনে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা উভয়কেই তাদের সম্পদের জাকাত আদায় করতে হবে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী যথাযথভাবে জাকাত প্রদান করলে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও কল্যাণ নিশ্চিত হবে।