ইরান-ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনা নিরসনে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, বর্তমান সংঘাত সত্ত্বেও এমন একটি চুক্তি করা যেতে পারে, যা একদিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং অন্যদিকে ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির স্বাভাবিক ধারাও বজায় রাখবে।
পুতিন বলেন, “আজকের ইরানে আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের চারপাশে সমাজের বৃহত্তর ঐক্য লক্ষ্য করছি। এ পরিস্থিতি খুবই সংবেদনশীল, তাই আমাদের যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। তবুও আমি বিশ্বাস করি, একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান পাওয়া সম্ভব।”
রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ‘রোসাটম’-এর তৈরি বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুই শতাধিক রুশ নাগরিক কর্মরত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পুতিন।
ইরানে ইসরায়েলের আচমকা বিমান হামলার প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। গত শুক্রবার ওই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়। এর জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা চালায়। এই চলমান পাল্টাপাল্টি আক্রমণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
পুতিন বলেন, “আমি এই বিষয়টি (আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ওপর হামলার আশঙ্কা) আলোচনার পর্যায়ে আনতেও চাই না।” পাশাপাশি তিনি জানান, ইসরায়েলের নেতাদের সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আলোচনাও হয়েছে।
ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে রাশিয়ার কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
এদিকে, পুতিনের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাড়া না দিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “উনি আগে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করুক।” হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “গতকাল উনি আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি বলেছি, ‘একটা অনুগ্রহ করুন, আগে নিজের যুদ্ধের সমাধান করুন।’”
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ও ইরানের সামরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। জানুয়ারিতে দুই দেশ একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিও স্বাক্ষর করে। পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ইরান রাশিয়াকে ড্রোন ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।
তবে পুতিন বলেন, “ইসরায়েলের হামলার পর ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো সামরিক সহায়তা চায়নি।”
রাশিয়া ও ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক সম্প্রতি চাপের মুখে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় চলমান সংকট এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। ইসরায়েলে বসবাসরত রুশ বংশোদ্ভূত নাগরিকদের বড় একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যা এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।