পাভেল দুরভ, টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, ফরাসি ম্যাগাজিন Le Point-কে দেয়া এক সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে ঘোষণা করেছেন যে তার মোট সম্পদের প্রায় ১৩.৯ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার বা ১৭.১ বিলিয়ন USD) তিনি মৃত্যুর পর তার ছয়জন জৈবিক সন্তান এবং তার শুক্রাণু দানের মাধ্যমে ১২টি দেশে জন্ম নেওয়া ১০০–১০৬ জন সন্তানদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেবেন । দুরভ জানিয়েছেন, উইলে নির্ধারণ করেছেন যে তারা তার মৃত্যুর ৩০ বছর পর উত্তরাধিকার গ্রহণ শুরু করতে পারবে, যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে ওঠে, নিজেদের জীবন গড়তে পারে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর নির্ভর না হয় ।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে তিনি তার সব সন্তানদের—জৈবিক কিংবা দাতারূপে—সমানভাবে দেখতে চান এবং মৃত্যুর পর তাঁদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব চান না । দুরভের বয়স বর্তমানে ৪০ এবং তিনি ফরাসি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বৈত নাগরিক। ২০১৩ সালে রাশিয়া ছেড়ে তিনি টেলিগ্রাম শুরু করেন, আজ এটি প্রায় এক বিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংযোগ মাধ্যম ।
এই ঘোষণার পেছনে সামাজিক ও প্রযুক্তিগত দুই দিক রয়েছে। একদিকে এটি উত্তরাধিকারের ধরণ ও সমতার নিয়ে আলোকপাত করে, অন্যদিকে এটি প্রো-ন্যাটালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যা বর্তমানে প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের মধ্যে কিছুটা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে । এলন মাস্ক ইতিমধ্যেই ১৪ সন্তান দিয়ে থাকায়, দুরভ নিজেও সন্তান প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন।
আইনি পরিস্থিতি হিসেবে, ২০২৪ সালের আগস্টে ফ্রান্সে দুরভ গ্রেফতার হন—ফরাসি বিচার ব্যবস্থার মতে টেলিগ্রাম অপরাধমূলক কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেনি । ২০১৪ সালের ২৪ আগস্টি প্যারিসে লেবুর্গে জেট থেকে নেমে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২৮ আগস্টে ৬টি অভিযোগ আনা হয়, যার মধ্যে রয়েছে শিশু প্রতারণা, মাদক পাচার, জালিয়াতি ও তথ্যপ্রদান না করার দোষ । তাকে ৫–৬ মিলিয়ন ইউরো জামিনে মুক্তি দেয়া হয়, তবে ফরাস্স ছাড়তে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং সে নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে বাধ্য হয় ।
মার্চ ২০২৫‑এ বিচারকের শর্ত শিথিল হওয়ায় দুবাই ভ্রমণের অনুমতি পান, এবং তিনি তখন দুবাই ফিরে যান । তবে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে রওয়ানা সীমাবদ্ধ রয়েছে, ফরাসি আদালতের নজরদারিতে রয়েছেন ।
ফরাসী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ম্যাক্রোঁ বলেছেন গ্রেফতারি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয় এবং আইনমাফিক কার্যকলাপের জন্য তা করা হয়েছে । সংযুক্ত আরব আমিরাত ফ্রান্সে তার কনসুলার সুবিধাসহ নজরদারি করছে । বিশ্ব প্রাব্লম হিসেবে মিডিয়াতে এই মামলাটি ‘প্রাইভেসি বনাম নিরাপত্তা’ বিতর্কে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু করেছে ।
এই পুরো প্রেক্ষাপট—দুরভের উত্তরাধিকার পরিকল্পনা, দীর্ঘ বিলম্ব আর বৈশ্বিক বিতর্ক এ নিয়ে—প্রযুক্তি, মানবাধিকার ও আইনি নিয়ন্ত্রণের সংমিশ্রণ তুলে ধরছে। ব্যক্তিগত দাতারূপে তার শতাধিক সন্তানের প্রতি ন্যায়বিচারের প্রচেষ্টা এখন টেলিগ্রামের জন্য নতুন মিথের জন্ম দিচ্ছে।