
সোমবার পাটনায় মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে আয়োজিত এক সরকারি অনুষ্ঠানে ১২০০–এর বেশি নবনিযুক্ত ‘আয়ুষ’ চিকিৎসকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছিল। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে হিজাব পরিহিত এক মুসলিম নারী চিকিৎসক নিয়োগপত্র নিতে এগিয়ে গেলে ৭৫ বছর বয়সী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার হঠাৎ তার হিজাবের দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন করেন—‘এটি কী?’—এরপর সামনের দিকে ঝুঁকে নিজেই হিজাব টেনে নামিয়ে দেন।

ঘটনার মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী চিকিৎসক দৃশ্যত অস্বস্তিতে পড়েন। মঞ্চে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রীকে থামানোর চেষ্টা করেন, আবার কেউ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকেন। এ সময় মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্যসচিব দীপক কুমার ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডেকে হাসতে দেখা যাওয়ায় নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়।
ভিডিওটি দেখুন সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেইজে।
ঘটনার পরপরই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় সমালোচনায় মুখর হয়। আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএম এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়। দলটির ভাষ্য, “নারীর সম্মান ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী চরম ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিয়েছেন।”
কংগ্রেস দল ঘটনাটিকে ‘নির্লজ্জ আচরণ’ আখ্যা দিয়ে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করেছে। দলটির দাবি, রাজ্যের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে থাকা ব্যক্তি প্রকাশ্যে এ ধরনের আচরণ করলে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে।
বিহারের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি নীতীশ কুমারের মানসিক স্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলে। দলটির মুখপাত্র এজাজ আহমেদ বলেন, “একজন মুসলিম নারীর হিজাব সরিয়ে দেওয়া মানে তার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার কেড়ে নেওয়া, যা সরাসরি সংবিধানবিরোধী।”
ঘটনাটি নিয়ে ধর্মীয় নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেওবন্দি আলেম ক্বারী ইসহাক গোরা বলেন, “একদিকে নারী সম্মানের কথা বলা হয়, অন্যদিকে প্রকাশ্যে একজন নারীকে অপমান করা হয়—এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তবে সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে নীতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড)। দলটির মুখপাত্র নীরজ কুমার বলেন, “নারী ও সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে নীতীশ কুমারের অবদান প্রশ্নাতীত।” সংখ্যালঘু কল্যাণমন্ত্রী জামা খান দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী ‘স্নেহবশত’ ওই আচরণ করেছেন এবং বিরোধীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনাটি রাজনৈতিক রঙ দিচ্ছে।
ভিডিওটি প্রতিবেশী দেশগুলোতেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানি বিশ্লেষক ও সাংবাদিকরা ঘটনাটিকে ভারতে মুসলিম নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে নীতীশ কুমারের আচরণ নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ এই বিতর্ক তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ে নতুন করে আলোচনা উসকে দিয়েছে।