ভারতের আগ্রায় ১৭ শতকের ঐতিহাসিক স্থাপত্য ‘মুবারক মঞ্জিল’ ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী, এই ভবনটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব নির্মাণ করেছিলেন। এর ধ্বংসের পেছনে স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা ও একটি নির্মাণ সংস্থার যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।
লখনৌ থেকে সরকারি কর্মকর্তারা ভবনটি পরিদর্শনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। শতাধিক ট্রাক্টরের সাহায্যে ভবনের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা কপিল বাজপেয়ী জানান, ভবনের ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যেই ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। আমরা এখন হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করার পরিকল্পনা করছি।”
স্থানীয়দের মতে, পুলিশের সহায়তায় একটি নির্মাণ সংস্থা এই ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিয়েছে। প্রশাসনের প্রতি দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলে তারা বলছেন, ঐতিহাসিক স্থাপত্য সংরক্ষণে সরকারি প্রতিশ্রুতি ছিল শুধুমাত্র কথার কথা।
ঐতিহাসিক দলিল এবং ব্রিটিশ পুরাতাত্ত্বিক আর্চিবল্ড ক্যাম্পবেল কার্লাইলের ১৮৭১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সমুদ্রগড়ের যুদ্ধে জয়লাভের পর আওরঙ্গজেব ভবনটি নির্মাণ করেন। তবে অন্য ঐতিহাসিক রাজকিশোর রাজ মনে করেন, এটি আসলে দারাশিকোর ভবন, যা আওরঙ্গজেব পুনর্নামকরণ করেছিলেন।
লাল বেলেপাথরে নির্মিত এই ভবন একসময় মুঘল সম্রাট শাহজাহান, সুজা এবং আওরঙ্গজেবের আবাসস্থল ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ভবনটি শুল্ক ও লবণ দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ১৯০২ সালের পর এটি স্থানীয়দের কাছে ‘তারা নিবাস’ নামে পরিচিতি পায়। ব্রিটিশ ও মুঘল স্থাপত্যের অপূর্ব সমন্বয়ে নির্মিত এই ভবনে তোরণ ও মিনারের নকশা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে আগ্রার জেলা প্রশাসক অরবিন্দ মাল্লাপ্পা বাঙ্গারি জানিয়েছেন, “আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ ও রাজস্ব বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপাতত ভবন এলাকায় কোনো হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না।” এসডিএম ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “এই ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে প্রশাসনের মদত রয়েছে। এটি শুধু ভারতের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ক্ষতি নয়, পর্যটন শিল্পের জন্যও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।”
স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটন মহলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। ঐতিহাসিক ভবনগুলোর সংরক্ষণে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতে প্রশাসনিক অবহেলা নতুন নয়। তবে মুবারক মঞ্জিল ধ্বংসের ঘটনাটি একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় হাইকোর্টে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ৭০% গুড়িয়ে দেবার পর ধ্বংস করার কাজ বন্ধ আছে। তবে ধ্বংস হওয়া ভবনটি পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এই ঘটনা ইতিহাস সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের প্রতি প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
আমাদের পথ চলায় সঙ্গী হন আপনিও:
Leave a Reply