দেশের ব্যাংক খাত বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। মাত্র পাঁচটি ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি। ফলে এই ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট, আয় হ্রাস, এবং আর্থিক ঘাটতি বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে পুরো ব্যাংক খাত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের মোট মূলধনের অনুপাত (এআরএআর) ৬.৮৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, এই হার ১০ শতাংশের বেশি থাকা বাধ্যতামূলক। গত বছরের জুনে এ অনুপাত ছিল ১০.৬৪ শতাংশ।
খেলাপি ঋণের বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে শ্রেণিকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২.৮৫ লাখ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা বেড়ে ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। এর মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১.৪৫ লাখ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৫১ শতাংশ।
খেলাপি ঋণের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, এর ৮২ শতাংশই অনাদায়ী কু-ঋণ, যা আদায় করা প্রায় অসম্ভব। এই পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
কেন বাড়ছে সংকট?
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোকে বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। ফলে তাদের মূলধন কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১০ সালের পর থেকে এমন খারাপ পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগের সরকারের সময় ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর সমস্যাগুলো উন্মোচিত হওয়ায় খেলাপি ঋণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যাংক খাতের প্রভাব ও ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, খেলাপি ঋণের এই পরিস্থিতি অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “এআরএআর কমে গেলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, যা অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।”
উপায় কী?
ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা সংকট সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন:
বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে দেশের ব্যাংক খাত গভীর সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।