বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে, ১৯৭১ সালে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানই দেশের “দ্বিতীয় স্বাধীনতা”। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হলেও প্রকৃত অর্থে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা হয়নি। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য স্বাধীনতার নামে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী দেশের কাছে নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে। তার ভাষায়, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানই জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াই ছিল, যেখানে কোটি কোটি মানুষ অংশ নিয়েছে এবং স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পেতে চেয়েছে।
গোলাম পরওয়ার আরও অভিযোগ করেন, জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তা ও ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা রুখতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুগুলোকে জামায়াতবিরোধী প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহল দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতকে বিতর্কিত করতে চেষ্টা করেছে, যাতে তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এই প্রচারণায় সফল হলেও শেষ পর্যন্ত জনগণের ঘৃণা ও প্রতিরোধের মুখে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী আদর্শিকভাবে দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। তবে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একাত্তরের মীমাংসিত বিষয়গুলোকে সামনে এনে দলটিকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়। অথচ স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১২ থেকে ১৩ জন কথিত স্বাধীনতাবিরোধীকে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য করা হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।
নির্বাচন প্রসঙ্গে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, অতীতের মতো যদি একতরফা নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে জনগণ তা মেনে নেবে না এবং তা পুনরায় বিতর্কিত হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিমসহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা সবাই জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে চলমান প্রচারণার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন এবং সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনের আহ্বান জানান।