প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে কার্যত কোনো সুশাসন ছিল না, বরং দেশটি একটি ডাকাত পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “হাসিনার সময়ে কোনো কার্যকর সরকার ব্যবস্থা ছিল না। দেশ পরিচালিত হয়েছে একটি ডাকাত পরিবারের শাসনের মতো, যেখানে সরদার থেকে নির্দেশ এলেই তা পালন করা হতো। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে গুম করা হতো, নির্বাচন হলে তা জয়ের জন্য নিশ্চিত করা হতো, আর প্রভাবশালীরা সহজেই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়েই পার পেয়ে যেত।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা দেশের যে ক্ষতি করেছেন, তার তুলনা হয় না। গাজার সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির মিল ছিল, পার্থক্য শুধু এটুকুই যে এখানে ভবন ধ্বংস হয়নি, কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস হয়েছে।”
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস দাবি করেন, হাসিনা সরকারের সময়ে জনগণের সম্পদ লুটের জন্য ব্যাংকগুলোকে কার্যত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “ব্যাংকের কর্মকর্তারা বন্দুক নিয়ে গিয়ে সব লুটে আনতেন।”
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “দিল্লি তাকে আশ্রয় দিতে পারে, কিন্তু ভারতকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের পরিবর্তন ব্যাহত করার চেষ্টা ভয়াবহ হতে পারে। এটি দেশের অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলবে।”
দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হাসিনার আমলের তুলনায় পরিস্থিতি অনেক ভালো হয়েছে।”
তবে সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে ‘অরাজক পরিস্থিতি’ চলছে, যা দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তার এই মন্তব্যকে অনেকেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি কঠোর সমালোচনা হিসেবে দেখছেন, কেউ কেউ এটিকে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত বলেও মনে করছেন।
তবে এসব বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো এবং সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই।”