ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে চলমান যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়েছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১০০ এর অধিক নিহত এবং অগণিত মানুষ আহতের খবর পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিস্থিতি ক্রমশ আরও জটিল এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে।
গাজার বিভিন্ন এলাকায় রাতভর ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের হামলায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। গাজা সিটির আল-দারাজ এলাকায় আল-তাবি’ইন স্কুলে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের ওপর বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। খান ইউনিসের পশ্চিমে মাওয়াসি এলাকায় শরণার্থী শিবিরে হামলায়ও বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এর গবেষক মইন রাব্বানি আল জাজিরায় দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের এই হামলা কি শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন অভিযান নাকি বৃহৎ আকারের সামরিক অভিযানের সূচনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কারণ ইসরায়েল জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, “হামাস বন্দীদের মুক্তি দিতে এবং যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।” তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইসরায়েল এখন থেকে গাজার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে আক্রমণ চালাবে।”
অন্যদিকে, হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু কখনোই গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী ছিলেন না। হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “ইসরায়েল এই হামলা চালিয়ে প্রমাণ করেছে যে তারা একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে। তারা যুদ্ধবিরতির চুক্তি করেছিল, তবে জানত এটি তারা বাস্তবায়ন করবে না।”
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “হামাস বন্দীদের মুক্তি না দিলে গাজায় নরকের দরজা খুলে যাবে। আমরা তাদের এমন শক্তি দিয়ে আঘাত করব যা তারা আগে কখনো দেখেনি।”
গাজার হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড় বাড়ছে। চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, সীমাবদ্ধ সরঞ্জাম এবং ক্রমবর্ধমান আহতদের কারণে তারা যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারছেন না। রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ থাকায় ত্রাণ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ। আযহারের ৪০০ লরির কাফেলা হাজার হাজার টন খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে। খাদ্যগুলো নষ্ট হতে শুরু করলেও গাজার মানুষ এগুলোর নাগাল পাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইজরায়েলের এই হামলা শুধু যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন নয়, বরং গাজায় মানবিক বিপর্যয়কেও আরও গভীর করছে।
সূত্র: আল জাজিরা
আরও পড়ুন: সারা বিশ্বে ইসলামবিদ্বেষ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে: জাতিসংঘ মহাসচিব