মার্কিন হামলার প্রতিবাদে IAEA’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন ইরানের - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:

মার্কিন হামলার প্রতিবাদে IAEA’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন ইরানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ৮ বার দেখা হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলার জবাবে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। দেশটির পার্লামেন্ট বুধবার (২৫ জুন) এক সর্বসম্মত ভোটাভুটিতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। ইরানি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজের তথ্য অনুযায়ী, পার্লামেন্টের উন্মুক্ত অধিবেশনে ২২৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে ২২১ জন এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। কোনো বিরোধিতা আসেনি। কেবল একজন সংসদ সদস্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

এই সিদ্ধান্ত এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলার পর। গত ২২ জুন রাতে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের নাতানজ, ফোর্ডো ও ইসফাহান শহরের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ছিল এই হামলার লক্ষ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে ‘অসাধারণ সামরিক সাফল্য’ বলে দাবি করেন। তার ভাষায়, এই হামলায় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সুবিধাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

কিন্তু বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)-র একটি গোপন রিপোর্ট ফাঁস হয়েছে। সেই রিপোর্ট বলছে, এই বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ইরানের স্থাপনাগুলো এতটাই শক্তিশালী কংক্রিটে নির্মিত যে মার্কিন ‘বাংকার বাস্টার’ বোমাগুলোর অধিকাংশই লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর মূল যন্ত্রপাতি এখনো অক্ষত রয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মন্তব্যে পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষক গর্ডন করেরা বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নির্মাণে এতটাই উন্নত কংক্রিট ব্যবহৃত হয়েছে যে বোমাগুলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে ট্রাম্পের কয়েক দশক পিছিয়ে যাওয়ার দাবি পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ।

এরপরই ইরান পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (AEOI) জানায়, এই হামলা পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (NPT) লঙ্ঘন করেছে। সেই সঙ্গে তারা ঘোষণা দেয়, দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ইরান তাদের ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি’ চালিয়ে যাবে এবং প্রয়োজন হলে সব ধরনের বিকল্প ব্যবহারের পথ খোলা রাখবে।

ইরানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা শুধু আন্তর্জাতিক আইন নয়, জাতিসংঘ সনদও ভঙ্গ করেছে। এ কারণেই IAEA’র সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ইরান বলেছে, দেশের স্বার্থ রক্ষায় যা যা প্রয়োজন সব করবে।

এদিকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার ১২ দিনের এই যুদ্ধবিরতির আগে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটে। ইসরায়েলের হামলায় ৬১০ জন ইরানি নিহত হন। অন্যদিকে ইরানের মিসাইল হামলায় ২৮ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু সামরিক এবং বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়।

বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে পরিস্থিতি থমথমে। কূটনৈতিকভাবে নতুন সমঝোতার চেষ্টা চালানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার কারণে উত্তেজনা আবারও তুঙ্গে।

এমন সময় ইরান IAEA’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত নিয়ে যে বার্তা দিয়েছে, তা মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT